মালগাড়ির সহকারী চালক মনু কুমার। —ফাইল ছবি।
ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী তিনি। আবার পুলিশের খাতায় অভিযুক্তও তিনি। মালগাড়ির সেই সহকারী চালক মনু কুমারকে ঘটনার দু’সপ্তাহ পরেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি ওই ঘটনার তদন্তে থাকা রেল পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট। রেল পুলিশ সূত্রের খবর, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের সঙ্গে মালগাড়ির ধাক্কার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী মালগাড়ির সহকারী চালক মনু ওই দুর্ঘটনায় জখম হন। প্রথমে শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চললেও পরে তাঁকে রেলের তরফে অসমের মালিগাঁও রেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই সহকারী চালকের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। তিনিই একমাত্র জানেন ঘটনার আগে ঠিক কী হয়েছিল।। কিন্তু চিকিৎসকেরা কথা বলার অনুমতি দিচ্ছেন না। আগামী দিনে অনুমতি না মিললে বিশেষ তদন্তকারী দল আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে বলে সূত্রের দাবি।
গত ১৭ জুন রাঙাপানি ও চটের হাট স্টেশনের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনে ধাক্কা মারে একটি মালগাড়ি। সংঘর্ষের অভিঘাতে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের শেষ কামরাটি মালগাড়ির ইঞ্জিনের উপরে উঠে যায়। এই দুর্ঘটনায় মালগাড়ির চালক, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের গার্ড সহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত অন্তত ৫০ জন। ওই ঘটনায় অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারা সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হলে তদন্ত শুরু করে রেল পুলিশ।
তদন্তকারীরা জানান, ওই সহকারী চালক ছাড়া ওই তদন্তে মূল ভূমিকা রয়েছে রাঙাপানির স্টেশন মাস্টার, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের চালক এবং রাঙাপানি ও চটেরহাটের মাঝের একটি লেভেল ক্রসিয়ের গেট ম্যান-এর। ওই চালকের সঙ্গে কথা বলা না গেলেও বাকিদের চলতি সপ্তাহে তদন্তকারীদের সামনে হাজির হতে বলা হয়েছে। কারণ ঘটনার দিন সকাল ৫.৩০ মিনিট থেকে রাঙাপানি স্টেশনের অটোমেটিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা খারাপ ছিল। পেপার সিগন্যালের ছাড়পত্রে ট্রেন চলছিল। রাঙাপানি স্টেশনের স্টেশন মাস্টার পেপার সিগন্যাল দিয়েছিলেন ওই দুই ট্রেনের চালককে। সেই পেপার সিগন্যালে কী বলা হয়েছিল তা জানার জন্যই ওঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। কেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে গিয়েছিল বা ধীরে চলছিল তা জানা জরুরি। একই সঙ্গে মালগাড়ির গতি কেন বেশি হয়েছিল, গার্ডের ভূমিকা সে ক্ষেত্রে কী ছিল সেটাও জানা দরকার। আবার গেট ম্যান কী দেখেছিলেন, জানতে হবে তা-ও। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, সকলের বয়ান মিলিয়ে দেখা গেলেই ওই দুর্ঘটনার পিছনে কী কারণ রয়েছে তা জানা যাবে। ইতিমধ্যে রেলের কাছে বিভিন্ন নথি চাওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, রেলের সেফটি কমিশনার নিয়ম মেনে ওই ঘটনার তদন্ত করছেন।