এমনই ঘটিতে পাঠানো হচ্ছে সঙ্গমের জল। নিজস্ব চিত্র
ভোর তখন হয়-হয়। ধীরে ধীরে ভিড় বাড়ছে সাগরের কাছে। হঠাৎ লাইন দিয়ে জলের দিকে এগোতে শুরু করল জনা চল্লিশের একটি দল। গলায় ঝুলছে জেলা অফিসের দেওয়া কার্ড। সব চেয়ে বেশি নজর যায় যে-বস্তুটির দিকে, সেটি পিতলের ঘটি। একটি করে ছোট্ট মাপের সেই ঘটি রয়েছে ওই দলের সকলের হাতেই। লাইন সামলানোর দায়িত্বে থাকা এক জন চেঁচিয়ে উঠে বললেন, “আর এই ক’টা আছে। ভরে দে বাবা!”
ব্যাপারটা কী? মেলা কার্যালয়ে ফিরে ওই লাইন সামলানো ব্যক্তিই জানান, সরকারি সিদ্ধান্তে গঙ্গাসাগরে কর্মীদের অনেকেরই এ বছর সময় কেটেছে ওই ঘটির তদারক করে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন অনলাইনে গঙ্গাসাগরের জল পাওয়া যাবে বলে ঘোষণা করার পর থেকে আবেদন এসেছে মোট ২২৩০টি। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, জল চেয়ে আবেদন করা হয়েছে গোটা দেশ থেকে। জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, ব্যাপারটায় যে এত সাড়া পড়বে, সেটা তারা ভাবেইনি। জল চেয়ে আবেদন করা শুরু হয়েছিল ৪ জানুয়ারি। রবিবার সেই আবেদন নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন জানান, স্রেফ আবেদন নেওয়াই নয়, গ্রাহকদের বিশ্বাস আর পুণ্যের কথা মাথায় রেখে ওই পিতলের ঘটিতে জল ভরা হয়েছে গঙ্গা যেখানে সাগরে মিলেছে, ঠিক সেই জায়গা থেকে। তার পরে সেই ঘটি নিয়ে যাওয়া হয়েছে কপিল মুনির আশ্রমে। সেখানে পুজো দেওয়ার পরে জল-সহ ঘটি ভরা হয়েছে কাগজের প্যাকেটে। সঙ্গে দেওয়া হয়েছে মিষ্টির প্যাকেট। সেই প্যাকেটই পাঠানো হচ্ছে আবেদনকারীদের কাছে। উলগানাথন বলেন, “গঙ্গাসাগরকে প্লাস্টিকমুক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছি আমরা। তাই ঘটি পাঠানো হচ্ছে এই পদ্ধতিতে। সবটাই আবেদনকারীরা পাচ্ছেন স্রেফ কুরিয়ারের খরচ দিয়েই। অন্য কিছুর জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছে না।”
আরও পড়ুন: শ্যামাপ্রসাদের নামে কলকাতা বন্দর, শুরু বিতর্কও
এ বারেই প্রথম সরকারের তরফে গঙ্গাসাগর এবং তার সংলগ্ন পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। সেই জন্য জেলা প্রশাসন এবং পুলিশের তরফে লাগানো হয়েছে মোট ১২৫০টি সিসি ক্যামেরা।
এ বারেই প্রথম হেলিকপ্টারে গঙ্গাসাগর থেকে কোনও রোগীকে হাসপাতালে পাঠানো হল। এ দিন মেলায় অসুস্থ হয়ে পড়েন ৫৭ বছরের অণিমা দাস এবং ৫৫ বছরের বিকাশ বেজ। অসমের বাসিন্দা অণিমাদেবী আত্মীয়দের সঙ্গে এসেছেন। তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম এবং হাওড়া-আমতার সোনামুইয়ের বাসিন্দা বিকাশবাবুকে হাওড়া হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দুপুরে অসুস্থ হয়ে পড়া দু’জনকেই দেখেন মেলার চিকিৎসকেরা। মৎস্যজীবী বিকাশবাবু প্রতি বছরই সাগরমেলায় যান। এ বার শরীর ভাল না-থাকায় সঙ্গে নেন ভাগ্নে অশোক তিলাইকে। তাঁর স্ত্রী মাধবীদেবী বলেন, ‘‘বিকেলে ভাগ্নে ফোনে বলল, মামা অসুস্থ। খুব চিন্তায় আছি।’’ জেলাশাসক জানান, মেলায় চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। সন্ধ্যায় মেলায় আসেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং সুজিত বসু। সুব্রতবাবু বলেন, “আগে আমরা কখনও রোগীকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে পাঠাতে পারিনি। এ দিন আট লক্ষ লোক হয়েছে। কাল পাঁচ লক্ষ ছিল। আরও আসছেন।”