মদন মিত্রের তর্পণ-কাণ্ডে অসন্তুষ্ট বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
নেতাদের ছবি টাঙিয়ে, তাতে মালা দিয়ে, বিজেপির ‘তর্পণ’ করেছেন মহালয়ায়। মদন মিত্রের রুচি, সুস্থতা ইত্যাদি নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্নও তুলেছেন। কামারহাটির তৃণমূল বিধায়কের এই কীর্তি নিয়ে এ বার প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘প্রচার’ পাওয়ার জন্য মদন এমন কাজ করেছেন বলেও মন্তব্য করেছেন স্পিকার। যদিও নিজের অবস্থানে অনড় মদন। উল্টে তাঁর উদ্দেশে করা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘মদ’-মন্তব্য নিয়ে বিধানসভার কাছে ‘বিচার’ চেয়েছেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক।
রবিবার বাবুঘাটে গিয়ে বিজেপির তর্পণ করেন মদন। মদনের দাবি, রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে বিজেপির, তাই এই তর্পণের আয়োজন। সেখানে তাঁকে দেখা যায়, শুভেন্দু এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের ছবিতে মালা দিতে। যদিও মদন জানান, তিনি চান ব্যক্তিগত জীবনে সুস্থ থাকুন তাঁরা। কামারহাটির তৃণমূল বিধায়কের এই তর্পণ-কাণ্ড ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। বিধায়কের এই কাণ্ডের রেশ পৌঁছেছে বিধানসভার আঙিনাতেও। এ নিয়ে বিমান বলেন, ‘‘এ সব করে ভাল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন না। এগুলি করলে কি গৌরব বৃদ্ধি পায়? আমি জানি না। সংবাদমাধ্যমের সামনে পাবলিসিটি পাওয়ার জন্য উনি এ সব করছেন।’’
নিজের অবস্থানে অবশ্য অনড় মদন। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘বিজেপির তো অন্তর্জলি যাত্রা আগেই হয়েছে। যেটুকু এখন করছে তা এজেন্সি দিয়ে। তাই তর্পণ করেছি। ওদের নেতাদের ছবি ওখানে ছিল। তাই দেখে মালা পরিয়েছি। ঠিক করেছি। যদি দল বা নেত্রী আমার কাজে অসন্তুষ্ট হন, তবে ক্ষমা চাইব।’’ বিমানের বক্তব্য নিয়ে মদনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘স্পিকারের তো এমনই হওয়া উচিত। এটা বিজেপি দলের হলে হত না।’’ এর সঙ্গেই কামারহাটির বিধায়কের সংযোজন, ‘‘শুভেন্দু মদ নিয়ে যা বলছেন, তা-ও দেখা উচিত বিধানসভার।’’ ঘটনাচক্রে, দলবদলের পর মদনকে নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে একাধিক বার তাঁকে ‘চিহ্নিত মাতাল’ বলে আক্রমণ করেছে শুভেন্দু। সেই প্রসঙ্গই এ বার টেনে এনেছেন তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী।
মদনের তর্পণ-কাণ্ড নিয়ে ক্ষুব্ধ বিজেপি। এ নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপির বালির বিজেপি নেতারা। বালি থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে গেরুয়াশিবিরের স্থানীয় নেতাদের তরফে। মদনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন বিজেপি নেতারা। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, যে অভিযোগ করা হচ্ছে সেই ঘটনা বালি এলাকায় ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রাজ্য রাজনীতিতে একে অন্যের প্রতি ‘কুকথা’র সংস্কৃতি বেশ কিছু দিন ধরেই বিতর্ক তৈরি করে চলেছে। শাসক, বিরোধী উভয় পক্ষই অভিযুক্ত। মদনের তর্পণ-কাণ্ড নিঃসন্দেহে এই বিতর্কে নবতম সংযোজন।