—প্রতীকী ছবি।
প্রায় নব্বই বছর আগে খাস বঙ্গভূমিতে রকেট উড়িয়েছিলেন এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান। তাঁর নাম স্টিফেন হেক্টর টেলর স্মিথ। একটি, দু’টি নয়, অন্তত তিনশোটি রকেট উৎক্ষেপণের অভিজ্ঞতা ছিল স্টিফেনের। সে সব রকেট মহাকাশে পাড়ি দিতে পারেনি ঠিকই। তবে রকেটে চাপিয়ে চিঠি কিংবা জিনিসপত্র যে এক জায়গা থেকে অন্যত্র পৌঁছে দেওয়া যায় তা দেখিয়েছিলেন তিনি।
রামচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কথাই বা ক’জন বাঙালি মনে রেখেছে? খাস উত্তর কলকাতার সন্তান, নবগোপাল মিত্রর ন্যাশনাল সার্কাস কোম্পানির ট্রাপিজ়ের তারকা খেলোয়াড় রামচন্দ্র অবশ্য তাক লাগিয়েছিলেন অন্য কাজে। ১৮৮৯ সালে উত্তর কলকাতা থেকে বিরাট বেলুনে চেপে পাড়ি দিয়েছিলেন বারাসতে!
কলকাতার ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজ়িক্স (আইসিএসপি)-এর অধিকর্তা সন্দীপ চক্রবর্তী বলছিলেন, ‘‘এ দেশে আকাশ অভিযান কিংবা রকেট বিজ্ঞানের পথিকৃৎ এই দু’জন। কিন্তু ইসরোর কোথাও এঁদের নাম নেই।’’ তাই পুজোর পরেই কলকাতার স্পেস মিউজ়িয়াম উৎসর্গ করা হচ্ছে স্টিফেন এবং রামচন্দ্রকে। শুধু তাঁদের নামই নয়, সংগ্রহশালায় থাকছে দু’জনের নানা স্মারকও। যেমন, রকেটে চাপিয়ে চিঠি বা জিনিসপত্র আদানপ্রদানে স্টিফেন ২ টাকা নিতেন এবং স্ট্যাম্প সেঁটে দিতেন। সেই স্ট্যাম্প আনা হয়েছে। বেলুনে চেপে রামচন্দ্রের আকাশপাড়ির যে বিজ্ঞাপন কাগজে প্রকাশিত হয়েছিল সেই কাগজের কাটিংও জোগাড় করেছেন অধিকর্তা।
তবে এ সব জিনিসের বাইরেও থাকছে চাঁদের এবং মঙ্গলের পাথর। থাকছে প্রথম চাঁদে পা দেওয়া মহাকাশচারী নিল আর্মস্ট্রংয়ের মাথার চুলও! এ পর্যন্ত যত বিজ্ঞানী মহাকাশ সংক্রান্ত বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন তাঁদের সই এবং স্মারক বই থাকছে। থাকছে পৃথিবীর প্রথম সারির সব নভশ্চরের স্মারকও। ভারতীয় নভশ্চর প্রয়াত কল্পনা চাওলার সই এবং স্মারকও থাকবে। ছাত্র জীবনে নোবেলজয়ী পদার্থবিদ এস চন্দ্রশেখরের ‘শিষ্য’ ছিলেন এই গবেষণা কেন্দ্রের অধিকর্তা। ‘গুরুর’ কাছ থেকে প্রাপ্ত বইয়ের সম্ভার তিনি সংগ্রহশালায় দিয়েছেন। আইসিএসপি-র অন্দরেই থ্রি-ডি প্রিন্টারের সাহায্যে তৈরি হচ্ছে পৃথিবীখ্যাত বিজ্ঞানীদের মুখাবয়ব।
তবে অধিকর্তা বলছেন, সংগ্রহশালার সব থেকে বড় চমক চাঁদের মাটিতে প্রথম মানুষের পদার্পণ ঘটানো মহাকাশযান অ্যাপোলো ১১-র প্রতিলিপি। শুধু প্রতিলিপি নয়, তার ভিতরে থাকবেন তিন নভশ্চরও। আদতে খড়ের কাঠামোর উপরে অবিকল নিল আর্মস্ট্রং, এডুইন অলড্রিন এবং মাইকেল কলিন্সের থ্রি-ডি প্রিন্টারে তৈরি মুখ, হাত, পা বসানো হবে। থাকবে নভশ্চরের পোশাক। একেবারে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের আবহে স্পিকারে শোনা যাবে নাসা এবং তিন মহাকাশচারীর কথোপকথনও!
আগামী ২৭ অক্টোবর এই সংগ্রহশালার উদ্বোধন। অধিকর্তার ভাষায়, ‘‘কলকাতার মিউজ়িয়াম তবে তার ৯০ শতাংশ জিনিসই কিন্তু আন্তর্জাতিক!’’ এমন সংগ্রহশালার উদ্বোধনও করবেন এমন ব্যক্তিত্ব যাঁর কাঁধে চেপে দেশ, দুনিয়ার সীমা ছাড়িয়ে মহাকাশে পৌঁছেছিল ভারত।
তাঁর নাম রাকেশ শর্মা!