শোভনকে আরও কোণঠাসা করতেই দেবশ্রীকে তুলে আনার ভাবনা তৃণমূলের।—ফাইল চিত্র
লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ঘর গুছিয়ে নেওয়া শুরু। আর দক্ষিণ ২৪ পরগনার সেই ‘গোছগাছ-সভা’র চেহারায় বুধবার স্পষ্ট যে, ভোটের প্রস্তুতি চলবে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দূরে রেখেই।
কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের দমকল মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি পদ থেকে সরানোর ঘোষণা অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু নতুন সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী দায়িত্ব হাতে পাওয়ার পরে প্রথম বড় বৈঠকটা ডাকলেন অক্টোবরের শেষ তারিখে। জেলা থেকে তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত সাংসদ ও বিধায়করা, জেলা পরিষদ সদস্যরা, পঞ্চায়েত সমিতিগুলির সভাপতিরা, পুরসভাগুলির চেয়ারপার্সন ও ভাইস চেয়ারপার্সনরা বৈঠকে ডাক পেয়েছিলেন। ডাক পেয়েছিলেন ছাত্র সংগঠন এবং সংখ্যালঘু সেলের নেতারাও। কিন্তু জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি তথা বর্তমান পর্যবেক্ষক শোভন চট্টোপাধ্যায় বৈঠকে ছিলেন না।
তৃণমূল সূত্রের খবর, শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ফোনে জানানো হয়েছিল বৈঠকের কথা। কিন্তু কোনও চিঠি দেওয়া হয়নি। সভা আয়োজনের মূল দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক সওকত মোল্লাকে, যিনি দলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণে শোভনের ঘোর বিরোধী হিসেবেই সম্প্রতি পরিচিতি পেয়েছেন। সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে সওকত অবশ্য ঢুকেছিলেন শোভনের হাত ধরেই।
আরও পড়ুন: বেতন কমিশনের মেয়াদ আরও ছ’মাস বাড়িয়ে দিল রাজ্য, ক্ষুব্ধ তৃণমূলের সংগঠনও
লোকসভা নির্বাচনের আগে কী ভাবে কাজ করতে হবে, কাকে কী দায়িত্ব পালন করতে হবে, কোন কোন বিষয়ে জোর দিতে হবে, জেলা সভাপতি শুভাশিস তা ব্যাখ্যা করেন। সওকত মোল্লা, মন্টুরাম পাখিরা, জয়ন্ত নস্কররাও ভাষণ দেন। তবে শোভন অনুগামী হিসেবে পরিচিতদের স্পষ্টতই কোণঠাসা দেখিয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: ফের বেইলি ব্রিজের গাড়ি চলাচলের নিয়ম পরিবর্তন
জেলা সভাপতি হিসেবে যে ধরনের দায়দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল শোভন চট্টোপাধ্যায়ের, তা তিনি পালন করেননি, সাংগঠনিক কাজকে অবহেলা করেছেন— তৃণমূল সূত্রের খবর, এমন ইঙ্গিত বেশ কয়েক জনের বক্তব্যেই এ দিন উঠে আসে। নতুন উদ্যমে সকলকে কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা সভাপতি। শোভন অনুগামীদের ক্ষমতা ছেঁটে দলে যুবনেতাদের গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকাতেই তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্ঘাত দেখা গিয়েছে অতীতে। যুব সংগঠনের নেতারা মূলত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী। শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অপসারণ এবং অভিষেক ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শুভাশিস চক্রবর্তীর উত্থানের সঙ্গে সঙ্গেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দাপট বাড়বে যুবনেতাদের। বুধবারের বৈঠকে অনুষ্ঠানিক ভাবে তাতে সিলমোহর পড়ল।
আরও পড়ুন: পর্যটকদের পরিত্রাতা রূপে মুখ্যমন্ত্রী
এক কালে শোভনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন রায়দিঘির বিধায়ক দেবশ্রী রায়। কিন্তু তৃণমূল সূত্রের খবর, সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে বিস্তর দূরত্ব শোভনের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এক সময়ে রায়দিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের যাবতীয় কাজ দেখভাল করতেন শোভন। পরে তিনি সে কাজ দেখতে অস্বীকার করেন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তা জানিয়েও দেন। সেই থেকেই দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল শোভনের। দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে শোভনের বিরুদ্ধে দেবশ্রী অভিযোগ জানান। তৃণমূল সূত্রের খবর, সম্প্রতি অভিষেকের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে কিছুটা ঢুকে পড়েছেন দেবশ্রী এবং তাঁকে জেলা তৃণমূলের মিডিয়া সেলের দায়িত্ব দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। শোভনকে আরও কোণঠাসা করতেই দেবশ্রীকে তুলে আনার ভাবনা, মত একাংশের।
বুধবার আমতলায় আয়োজিত দলীয় সভায় দেবশ্রী রায় অবশ্য হাজির ছিলেন না। তিনি বললেন, ‘‘এত অল্প সময়ের নোটিসে সভা ডাকা হয়েছিল যে, আমি যেতে পারিনি।’’ কিন্তু এ দিনের সভায় থাকুন বা না থাকুন, দেবশ্রীর গুরুত্ব দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বাড়তে চলেছে বলেই খবর। জেলা মিডিয়া সেলের দায়িত্ব পাওয়ার প্রসঙ্গে দেবশ্রী অবশ্য বলেছেন, ‘‘এ রকম কোনও দায়িত্ব আমাকে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে আমার জানা নেই। আমাকে কেউ এখনও কিছু বলেননি।’’