—ফাইল চিত্র।
কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ‘বৈশাখীর গ্ল্যাক্সো বেবি’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। গত সোমবারের সেই ব্যক্তিগত আক্রমণের জবাবই যেন বৃহস্পতিবার দিলেন শোভন। কুণালকে ‘পকেটমার’-এর সঙ্গে তুলনা করে আক্রমণ শানালেন সাংবাদিক বৈঠকে। শুধু তাই নয়, সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের থেকে মোটা অঙ্কের ‘বেতন পাওয়া’ কুণাল ‘দালাল’-এর কাজ করতেন বলেও বৃহস্পতিবার আক্রমণ করলেন শোভন।
গত সোমবার বিজেপি-র হয়ে প্রথম মিছিলে অংশ নেন শোভন-বৈশাখী। সে দিন গোলপার্ক থেকে মিছিল করে সেলিমপুরে সভা এবং সাংবাদিক বৈঠক করেন তাঁরা। ওই কর্মসূচিতে বার বার তৃণমূলকে আক্রমণ করেন শোভন। আর সেই আক্রমণে উঠে আসে কুণাল প্রসঙ্গও। সেই থেকেই শুরু শোভন-কুণাল মন্তব্যের লড়াই।
সোমবারই রানাঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে ‘ওয়াশিং মেশিন’ বলে উল্লেখ করে বলেন, ‘‘তৃণমূলে থাকলে কালো আর বিজেপিতে গেলে ভাল!’’ এর জবাব দিতেই ওই দিন বিজেপি-র মঞ্চ থেকে কুণাল প্রসঙ্গ টেনে শোভন বলেন, ‘‘ওঁর (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে বলেই এ সব বলছেন। রাজীব কুমারকে বাঁচাতে ধর্নায় বসেছিলেন তিনি। আবার সেই রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে শিলংয়ে গিয়ে সাক্ষী দিয়ে আসা কুণাল ঘোষকে দলের মুখপাত্র নিয়োগ করেছেন।’’ এর পরেই শোভন সম্পর্কে কুণাল সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘উনি তো বৈশাখীর গ্ল্যাক্সো বেবি। ওঁর কথার আর কী জবাব দেব?’’
আরও পড়ুন: শোভন-বৈশাখীর প্রচারসূচিতে নেই বেহালা, আপাতত ব্রাত্যই নিজ-কানন
আরও পড়ুন: ফেসবুকে বিক্ষুব্ধ সাংসদ শতাব্দী, শনিবারবেলায় তাকিয়ে তৃণমূল
শুধু ‘বৈশাখীর গ্ল্যাক্সো বেবি’ বলাই নয়, কুণাল পরে অভিযোগ তোলেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স কেনার টাকা আমার এমপি ল্যাড থেকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনও অ্যাম্বুল্যান্সেই আমার নাম ছিল না। সব নাম মুছে ফেলা হয়েছিল। ওই অ্যাম্বুল্যান্স আদৌ কেনা হয়েছিল কি না তা-ও আমার জানা নেই।’’ কুণালের সেই অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে শোভন বলেন, ‘‘সারদার টাকায় যে ২০টি অ্যাম্বুল্যান্স ও ১০০টি মোটরসাইকেল কেনা হয়েছিল, সেগুলো তো টাকা তোলার কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলকে সর্বক্ষেত্রে বিতর্কিত করেন কুণাল।’’ সেই সব প্রসঙ্গ ফের তোলার পাশাপাশি বৃহস্পতিবার আরও এক ধাপ এগিয়ে আক্রমণ শানান শোভন। চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যেই শোভনকে গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন কুণাল। আক্রমণাত্মক শোভনের দাবি, ‘‘মোটা অঙ্কের বেতন নিয়ে বিভিন্ন চিটফান্ড সংস্থার হয়ে কুণালের কী ভূমিকা ছিল তা সবাই জানে।’’ সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘পকেটমার ধরা পরে গেলে অন্য ব্যক্তির দিকে আঙুল তুলে পকেটমার, পকেটমার বলে চেঁচায়।’’ একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘পকেটমারকে ধরে এনে যাঁরা মুখপাত্র করেছেন তাঁরা দেখবেন পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে। কুণাল ঘোষকেও মানুষ জানে, ৩৬ বছর জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও জানে।’’ কুণাল সাংবাদিক হিসেবে যে অঙ্কের বেতন পেতেন তার জন্য যোগ্যতা ছিল ‘দালালি’ বলেও আক্রমণ করেন শোভন।
দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে পরেই বিজেপির রাজ্য দফতরে এসেছিলেন শোভন-বৈশাখী। সেটা ২০১৯ সালের অগস্ট। এর পরে অনেক মান-অভিমান পর্ব গিয়েছে। বৃহস্পতিবার তাঁদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুতির খামতি ছিল না। পুষ্পবৃষ্টির মধ্য দিয়ে তাঁরা যান বিজেপি-র রাজ্য দফতরে কলকাতা জোনের জন্য নির্দিষ্ট ঘরে। সেখানেই শোভন ও বৈশাখীর জন্য পাশাপাশি বসার ব্যবস্থা হয়েছে। ওই ঘরে বসবেন কলকাতা জোনের আরও দুই নেতা দেবজিৎ সরকার ও শঙ্কুদেব পণ্ডাও।