হেস্টিংসে বিজেপির কার্যালয়ে দিলীপ ঘোষ ও শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার। নিজস্ব চিত্র।
প্রথমে বিধায়ক। তার পরে সাংসদ। তৃতীয় পর্বে ফের বিধায়ক হয়ে রাজ্যের মন্ত্রী এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার শীর্ষ পদাধিকারী। তৃণমূলের শীর্ষ স্তরে সাংগঠনিক পদও ছিল। সেই শুভেন্দু অধিকারী শনিবার ঘোষণা করলেন, ‘‘আমার লজ্জা হচ্ছে যে, ওই দলটা আমি ২১ বছর ধরে করেছি।’’
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার এক সপ্তাহ পরে এ দিন শুভেন্দু-সহ দলত্যাগী ১০ জন বিধায়ক, এক সাংসদ এবং অন্য নেতাদের বিজেপির হেস্টিংস কার্যালয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে মোট ১১০ জন সংবর্ধিত হন। শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমরা বিগত দিনে যে রাজনৈতিক দলটা করে এসেছি, তা এখন কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। সেই রাজনৈতিক দলে কোনও শৃঙ্খলা নেই। কেউ সেখানে নিয়োগও পান না, কোনও বৈঠকের সিদ্ধান্তও লেখা হয় না। সেই কোম্পানি থেকে বেরিয়ে এসে আমরা প্রকৃত রাজনৈতিক দলের সদস্যপদ পেয়েছি।’’
শুভেন্দুর আরও বক্তব্য, ‘‘বাম জমানায় আমরা দেখেছি অফ দ্য পার্টি, ফর দ্য পার্টি, বাই দ্য পার্টি। সিপিএমের সেই ছেঁড়া চটি পায়ে গলিয়েই আমরা ২১ বছর হেঁটেছি। এই সংস্কৃতি থেকে বাংলাকে বার করে আনতে হবে। সেটা একমাত্র বিজেপিই পারে।’’ এই প্রেক্ষিতেই তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি কর্মীরা অনেক পরিশ্রম করেছেন। মার খেয়েছেন। ১৩৫ জন আত্মবলিদান দিয়েছেন। এই ভাবে তাঁরা দলকে অনেকটা পথ এগিয়ে দিয়েছেন। বাকি কাজ আমরা দায়িত্ব নিয়ে করব এবং দলকে সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছে দিতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখব না।’’ অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে কেন্দ্র এবং রাজ্যে বিজেপিরই সরকার প্রয়োজন বলে শুভেন্দু জানান।
শুভেন্দুর ওই সব মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূল সাংসদ তথা দলের বর্ষীয়ান নেতা সৌগত রায়ের কটাক্ষ, ‘‘কিছু মানুষ এ রকম অবোধ থাকেন। তাঁদের জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত হতে সময় লেগে যায়। দু’বার বিধায়ক, মন্ত্রী, সাংসদ হয়েছেন। ২১ বছর এই দলের দুধ-ক্ষীর খেয়ে এই উপলব্ধি হয়েছে!’’
বিধানসভা ভোটের আগে এক ঝাঁক নতুন নেতা এবং জনপ্রতিনিধি অন্য দল থেকে বিজেপিতে আসায় দলের অন্দরে আদি-নব্য দ্বন্দ্ব বেড়েছে। যা সামাল দিতে ইতিমধ্যেই চার নেতা-নেত্রীকে শো-কজও করেছে দল। বিজেপি সূত্রের খবর, এ দিন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিজেপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশ বলেন, কেউ নতুন নয়, কোউ পুরনো নয়। সকলেই বিজেপির কর্মী। সকলের একটাই লক্ষ্য হবে— বিজেপিকে সরকারে আনা।
এ দিন ওই অনুষ্ঠানে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়, রাজ্য দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সহ পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন, শিবপ্রকাশ, রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত এবং প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় ছিলেন। নবাগতদের মধ্যে মঞ্চে জায়গা এবং বক্তৃতা করার সুযোগ পেয়েছিলেন একমাত্র শুভেন্দুই। বিজেপির হেস্টিংস কার্যালয়ে শুভেন্দুর জন্য আলাদা ঘরও রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজ্যে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা জুলাইয়ের পর সর্বনিম্ন, বাড়ল কলকাতায় মৃতের সংখ্যা
মুকুলবাবু ওই অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘আমি তৃণমূল ছাড়ার পর থেকেই ওই দলে যাঁদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল, সকলকে ফোন করে বলেছি, ভয় পাচ্ছিস, ছাড়তে পারছিস না। কিন্তু তৈরি থাক। অসম্মানেরও একটা সীমা আছে। সীমা পেরিয়ে গেলে কিন্তু আর ওই দলটা করতে পারবি না।’’