বিতর্কিত সেই পুজো, যেখানে অসুরকে অবিকল গান্ধীর মতো করে সাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফাইল চিত্র।
দক্ষিণ কলকাতার রুবি পার্কের একটি মণ্ডপে দেখা গিয়েছিল অবিকল মহাত্মা গান্ধীর মতো দেখতে অসুরকে। তা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। পরে জানা যায়, এই পুজোর মূল উদ্যোক্তা অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার নেতা চন্দ্রচূড় গোস্বামী। বুধবার সেই চন্দ্রচূড়কেই নিগ্রহ করার অভিযোগ উঠল অজ্ঞাতপরিচয় কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে পুলিশি হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে কসবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে হিন্দু মহাসভা।
পুজো উদ্যোক্তাদের তরফে জানা গিয়েছে, বুধবার সকালে তিন জন যুবক তাদের মণ্ডপে প্রতিমা দর্শন করতে আসেন। তাঁরা প্রতিমার ছবি তুলছিলেন। মণ্ডপের ভিতরেই ছিলেন চন্দ্রচূড়। সেই সময় হঠাৎই চন্দ্রচূড়ের উপর তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েন বলে দাবি পুজো উদ্যোক্তাদের। বাকি কর্মকর্তারা চন্দ্রচূড়কে সরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করলে ওই তিন জন যুবক মণ্ডপ ছেড়ে চলে যান। অভিযুক্ত তিন জনকে গ্রেফতার করার দাবি তুলেছেন পুজো উদ্যোক্তারা।
পরে চন্দ্রচূড় আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘হাতে ক্যামেরা নিয়ে আসা তিন জন প্রতিমা বাদেও অন্যান্য ছবি তুলছিলেন। সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা কী ছবি তুলছেন, তা জিজ্ঞাসা করি। তারপরই আমাকে এবং আর এক কর্মকর্তাকে নিগ্রহ করেন ওই তিন জন।’’ চন্দ্রচূড় জানান, তিন জন ব্যক্তির মধ্যে এক জন নিজেকে কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিক বলে পরিচয় দেন। ওই ব্যক্তি চন্দ্রচূড়কে জানান, তাঁরা ঠিক কাজ করেননি। পুজো মিটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চন্দ্রচূড়ের দাবি, তার পরেই চম্পট দেন অভিযুক্তরা। এই ঘটনার পর বুধবারের পূর্বনির্ধারিত সাংবাদিক বৈঠক স্থগিত রেখে কসবা থানায় পৌঁছন চন্দ্রচূড়রা।
হিন্দু মহাসভার এই পুজো-বিতর্ক নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছিল আগেই। চন্দ্রচূড়ের সঙ্গে বিজেপির যোগসূত্র তুলে ধরে কটাক্ষ করতে শুরু করে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘ওরা তো বিজেপিরই অন্তরাত্মা। বিজেপি তো গডসের পূজারি। ওরা তো বিজেপিই মুখ! এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে বিজেপি।’’ অন্য দিকে, সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। তিনি বলেছিলেন, “এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। গান্ধীজি আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মধ্যে এক জন। তাঁকে এ ভাবে অসুররূপে দেখানো হয়েছে, এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত পুলিশের।”
চন্দ্রচূড়ও লাগাতার কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে বলেছেন, “আমি তো প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করেছি। উনি তো বলছেন, গান্ধীর অনুপ্রেরণায় আট বছর সরকার চালিয়েছেন। এটা অবিশ্বাস্য। তার কারণ, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম পুলিশের কাছে তুলে দেওয়ার জন্য যে মানুষটির নাম জড়িয়েছে, কংগ্রেস থেকে যে ভাবে নেতাজিকে বিতাড়িত করা হয়েছে, ভগৎ সিংহের ফাঁসির ক্ষেত্রে যার অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ভূমিকা রয়েছে, সেই মানুষটি জাতির জনক কেন হতে যাবে?’’