গরমের প্রকোপে প্রায় প্রতি বছরই ছুটি এগিয়ে আনতে হচ্ছে। প্রতীকী ছবি।
তাপপ্রবাহ কমেছে। হালকা বৃষ্টিও শুরু হয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহের দরুন সাত দিনের হঠাৎ-ছুটির পরে আজ, সোমবার স্কুল আবার খুলছে। কিন্তু তা খুলতে চলেছে মাত্র সাত দিনের জন্য। এই অবস্থায় পূর্বনির্ধারিত সূচি মেনে ২৪ মে গরমের ছুটি শুরু করার দাবি জানাচ্ছে শিক্ষা শিবির। সেই সঙ্গে সামনের বছর থেকে গরমের ছুটি স্থায়ী ভাবে এগিয়ে আনার দাবি তুলতে শুরু করেছেন সরকারি, সরকার পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের শিক্ষকেরা। তাঁদের বক্তব্য, গরমের প্রকোপে প্রায় প্রতি বছরই যখন ছুটি এগিয়ে আনতে হচ্ছে, পাকাপাকি ভাবে সেটা এগিয়ে আনলে বাড়তি ছুটি এবং পড়ুয়ার ক্ষতি এড়ানো যাবে।
গ্রীষ্মের মেজাজমর্জি কয়েক বছর ধরে ভীষণ ভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় অন্যান্য ক্ষেত্রের সঙ্গে সঙ্গে সমস্যায় পড়ছে স্কুলশিক্ষা। নির্ধারিত গরমের ছুটি ছাড়াও দহন-দাপটে বাড়তি ছুটি দিতে হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। যেমনটা ঘটছে চলতি বছরে। অতিরিক্ত ছুটির দরুন পঠনপাঠনের ক্ষতি এড়াতেই সামনের বছর থেকে গরমের ছুটি স্থায়ী ভাবে এগিয়ে আনার দাবি উঠছে।
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আশঙ্কা, প্রকৃতির রোষে ছুটি এগিয়ে আনার ফলে যে-ভাবে দীর্ঘ কাল স্কুল বন্ধ রাখতে হচ্ছে, তাতে ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যক্রম শেষ করতে সমস্যা হবে। অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেসের রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি মনে করেন, এমনিতেই সরকারি স্কুলে ছাত্র সংখ্যা কমছে। এ ভাবে দীর্ঘ ছুটি থাকলে সরকারি স্কুল আরও পিছিয়ে পড়বে। কমবে পড়ুয়ার সংখ্যা। তাঁর বক্তব্য, গ্রীষ্মাবকাশের নির্ধারিত তারিখ ২৪ মে-র বদলে ২ মে থেকে সরকারি স্কুলে গরমের ছুটি পড়ে গেলেও বেসরকারি স্কুল খোলা থাকবে। তাতে বেসরকারি স্কুলে চলে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে।
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘প্রতি বার গরমের ছুটি এগিয়ে আনতে হচ্ছে। ফলে ছুটি দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। তার চেয়ে আগামী বছর থেকে পরিকল্পনা করে গরমের ছুটি দেওয়া হোক। প্রয়োজনে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে ছুটি দেওয়া হোক।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, তাপপ্রবাহ, অতিবৃষ্টি বা অনুরূপ প্রাকৃতিক কারণে প্রয়োজনে স্কুলগুলির হাতে ছুটি মঞ্জুর করার ক্ষমতাও দেওয়া হোক।
প্রথম সূচি পরিবর্তন করে গরমের ছুটি ২৪ মে-র পরিবর্তে ২ মে শুরু করার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিক্ষক শিবিরের বক্তব্য, রুদ্ররোষ প্রশমিত। বৃষ্টিরও ইঙ্গিত মিলছে। আবহাওয়া যদি কমবেশি এমনটাই থাকে, তা হলে ২ মে থেকে গরমের ছুটি দেওয়ার আদৌ দরকার আছে কি? তাদের দাবি, গরমের ছুটি শুরু হোক প্রথম সূচি অনুযায়ী, অর্থাৎ ২৪ মে। কারণ, এত ছুটি থাকলে পাঠ্যক্রম শেষ করা যাবে না বলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আশঙ্কা।
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই রাজ্য জুড়ে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। সেই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী গরমের ছুটি এগিয়ে আনার কথা ঘোষণা করেন। জানিয়ে দেন, গরমের ছুটি ২৪ মে-র পরিবর্তে ২ মে থেকে পড়বে। তাপপ্রবাহ বাড়তে থাকায় গত ১৭ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়। সেই হঠাৎ-ছুটির শেষে আজ রাজ্যের প্রায় সব সরকারি ও বেসরকারি স্কুল খুলতে চলেছে।
স্কুলপ্রধানদের সংগঠনের তরফে চন্দন বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি, নির্ধারিত ২৪ মে থেকেই গরমের ছুটি দেওয়া হোক। এখন আবহাওয়া অনেকটা ভাল। মে মাসে যদি ফের তাপপ্রবাহ শুরু হয়, তখন অবস্থা বুঝে কিছু দিনের জন্য ছুটি দিলেই হবে।’’