Calcutta High Court

শিক্ষক নিয়োগে ভুয়ো শংসাপত্র পেশ, হাই কোর্টে অভিযোগ স্বীকার করলেন কয়েকজন মহকুমাশাসক

শীঘ্রই ওই সব শংসাপত্র বাতিল করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ওই মহকুমাশাসকরা। তাঁরা আদালতে জানিয়েছেন, বিষয়টি নজরে আসার পরেই বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:১৩
Share:

বিচারপতি বিশ্বজিত বসু। ফাইল চিত্র।

স্কুলের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় ‘ভুয়ো’ জাতিগত শংসাপত্র ব্যবহার করার অভিযোগ আগেই উঠেছিল। এ নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলাও হয়। এ বার জাতিগত শংসাপত্র সঠিক নয় বলে কলকাতা হাই কোর্টে স্বীকার করে নিলেন কয়েক জন মহকুমাশাসক। শীঘ্রই ওই সব শংসাপত্র বাতিল করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা। ওই মহকুমাশাসকরা আদালতে জানিয়েছেন, বিষয়টি নজরে আসার পরেই বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

‘ভুয়ো’ শংসাপত্র ব্যবহার করে চাকরি পেয়েছেন, এমন ৫৫ জনের একটি তালিকা বাছাই করে আদালতের সামনে তুলে ধরেন মামলাকারীরা। ওই ৫৫ জনের মধ্যে ৩৩ জনের রিপোর্ট জমা পড়েছে আদালতে। মণ্ডল পদবি তফসিলি জনজাতিভুক্ত নয় বলে স্বীকার করে নেন ডায়মন্ড হারবারের মহকুমাশাসক। তিনি আদালতে জানান, জাতি শংসাপত্রটি ভুল করে দেওয়া হয়েছে। সেটি বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে। একই পথে হেঁটে মাহাতো পদবির কয়েক জনকে ভুল করে তফসিলি জনজাতি শংসাপত্র দেওয়া হয়েছিল মেনে নেন মুর্শিদাবাদের লালবাগের মহকুমাশাসক। তিনি ৪টি শংসাপত্র বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন। আবার অনেক মহকুমাশাসক দাবি করেছেন, আবেদনকারীরাই ভুল তথ্য দিয়ে শংসাপত্র নিয়েছেন।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ভুয়ো শংসাপত্র দেওয়া নিয়ে একাধিক অভিযোগ ওঠে। মামলাকারী অভিযোগ করেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের এক প্রার্থীকে বেদিয়া উপজাতি দেখিয়ে তফসিলি জনজাতির শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু প্রশ্ন তুললে বীরভূম সদরের মহকুমাশাসক জানান, বেদিয়া উপজাতির ওই প্রার্থী তফসিলি জনজাতির মধ্যেই পড়েন। তাঁর শংসাপত্রে কোনও ভুল নেই। কিন্তু মুসলমানরা যে তফসিলি জনজাতিভুক্ত হন না সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিচারপতি বসুর মন্তব্য, “বাংলায় বেদিয়া উপজাতির মানুষরা যে মুসলিমও হতে পারেন, এর ব্যাখ্যা প্রয়োজন।”

Advertisement

এর আগে এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি বসু সিবিআইয়ের আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্যকে ডেকে বলেছিলেন, নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত অন্য কোনও দৃষ্টিকোণ থেকেও করতে হতে পারে। পরে জাতি শংসাপত্র খতিয়ে দেখতে সিবিআইয়ের আইনজীবীকেই দায়িত্ব দেয় হাই কোর্ট। তাঁকে আদালতবান্ধব হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এ বিষয়ে তিনি হাই কোর্টকে রিপোর্ট দিয়ে জানাবেন। প্রসঙ্গত, স্কুলের চাকরিতে ভুয়ো শংসাপত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট মহকুমাশাসকদের কাছে রিপোর্ট আকারে ব্যাখ্যা চেয়েছিল হাই কোর্ট।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ, বেশ কিছু চাকরিপ্রার্থীকে তফসিলি জনজাতি (এসটি) না হওয়া সত্ত্বেও শংসাপত্র দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তা দেখিয়ে চাকরিও পেয়ে গিয়েছেন অনেকে। ভুয়ো শংসাপত্রের অভিযোগ তুলে হাই কোর্টে মামলা করেন হেমাবতী মাণ্ডি-সহ ৩ জন চাকরিপ্রার্থী। তাঁদের অভিযোগ, সঠিক শংসাপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন। অন্য দিকে, যাঁদের শংসাপত্র ভুয়ো, তাঁরা চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। আদালতে অভিযোগকারীদের হয়ে মামলাটি লড়ছেন আইনজীবী শামিম আহমেদ। এই মামলার শুনানিতে গত ১৫ ডিসেম্বর কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু নির্দেশ দেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির মহকুমাশাসকদের রিপোর্ট জমা দিয়ে জানাতে হবে, কিসের ভিত্তিতে তাঁরা এই শংসাপত্র দিয়েছেন।

বস্তুত, স্কুল সার্ভিস কমিশন কর্মশিক্ষা বিষয়ে মোট ১৯৭৭ জনের মেধাতালিকা প্রকাশ করে। তাঁদের মধ্যে ৫৫ জনের নাম ভুয়ো শংসাপত্রের তালিকায় উঠে এসেছে। দেখা গিয়েছে, তফসিলি জনজাতির ভুয়ো শংসাপত্রের সেই তালিকায় রয়েছেন ঠাকুর, রায়, বড়ুয়া, রাউত, দাস, কর্মকার, ঘোড়ুই, মাহাতো, হাসিবের মতো পদবিধারীরাও। মেধাতালিকায় তাঁদের তফসিলি জনজাতি হিসাবে দেখানো হয়েছে। বিচারপতি যা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘‘ঠাকুর, রায়, এঁরা সবাই তফসিলি সম্প্রদায়ের?’’ তার পরেই রিপোর্ট তলব করা হয়। জানুয়ারি মাসে এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement