অযোধ্যার রামমন্দির। —ফাইল চিত্র।
অক্ষত চাল, মন্দির দর্শনের আমন্ত্রণপত্র, নবনির্মিত মন্দিরের ছবি নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচার হয়েছে। তবু কি বাংলায় রামমন্দির নিয়ে আবেগ সর্বাত্মক ছড়িয়ে দেওয়া গিয়েছে, এই প্রশ্নে এখনও নিঃসংশয় নয় গেরুয়া শিবির। তাই অযোধ্যায় রামলালার ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’র দিন কলকাতার রাস্তায় ‘বাঙালি’ রামকে মিছিলে নিয়ে যাওয়ার বিশেষ পরিকল্পনা
নেওয়া হচ্ছে।
রাজ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনে ‘বহিরাগত’ তকমায় ধাক্কা খেতে হয়েছিল বিজেপিকে। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘বহিরাগত’ তকমা ঝেড়ে ফেলতে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বাংলা নামের খোঁজ চালাচ্ছে বিজেপি। ঠিক তেমনই রামকে যে এখনও বাংলার মানুষের একাংশ উত্তর ভারতের দেবতা মনে করেন, তা ঘরোয়া আলোচনায় স্বীকার করে নেন বিজেপি নেতারা। তাই দলের নাম না জড়ালেও রামকে বাঙালির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে বিশেষ পরিকল্পনা নিচ্ছে বিজেপি-ঘনিষ্ঠ কিছু সংগঠন।
বিজেপি নেতাদের অবশ্য যুক্তি, দেবী দুর্গা যতটা বাঙালির, ঠিক ততটাই রামও বাঙালির। সেই কারণেই রামচন্দ্রের প্রবর্তন করা অকাল বোধনের তিথি মেনেই বাঙালিরা পুজো-পার্বণ করে থাকেন। বাসন্তী পুজোর চল থাকলেও উৎসব হিসেবে তা ধারে-ভারে শরৎ কালের দুর্গা পুজোর সমকক্ষ নয়। প্রসঙ্গত, এ রাজ্যে রামনবমী পালনের সময়ে রামের সঙ্গে বাঙালির এই যোগের কথাই বলে এসেছেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা।
সূত্রের খবর, আগামী ২২ জানুয়ারি রামলালার ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’র দিন গিরীশ পার্কের গণেশ টকিজ় থেকে কলকাতার রামমন্দির পর্যন্ত মিছিল করতে চলেছে কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। সেই মিছিলের অনুমতি চেয়ে ইতিমধ্যে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে তারা। শুনানির শেষে শুক্রবার সেই অনুমতিও মিলেছে। মিছিলে উপস্থিত থাকার কথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। সেখানেই রামচন্দ্রকে উপস্থিত করানো হবে বাঙালির ‘অকাল বোধন প্রবক্তা’ হিসেবে। পুরাণ অনুযায়ী, সীতাকে লঙ্কা থেকে উদ্ধার করতে রাবণের সঙ্গে যুদ্ধের আগে দেবী দুর্গার আরাধনায় সন্ধি পুজোর সময়ে রাম দেখেছিলেন, দেবীর পায়ে ১০৮টি নীল পদ্ম দেওয়ার অঙ্গীকার থাকলেও একটি কম পড়ছে। তখন কথা রাখতে তির চালিয়ে নিজের চোখের মণি দেবীর পায়ে নিবেদন করতে উদ্যত হয়েছিলেন রামচন্দ্র। কলকাতায় ২২শের মিছিলে দেবী দুর্গার সামনে নিজের চোখের মণির দিকে তির তাক করা রামচন্দ্রের সেই মূর্তি থাকবে। তাকে ঘিরেই পুজো-অর্চনা, ধুনুচি নাচ চলবে। কুমোরটুলিতে সেই মূর্তি গড়ার কাজ চলছে। মিছিল রামমন্দিরে শেষ হওয়ার পরে সেখানে ওই মূর্তির পুজোও হবে।
বিজেপি সূত্রের দাবি, দল সামনে না এলেও রামমন্দিরকে কেন্দ্র করে উত্তর কলকাতাতে ১৫০ জায়গায় অনুষ্ঠান হচ্ছে। এলইডি পর্দা লাগিয়ে ৬০টি ওয়ার্ডে রামলালার ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’র অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।