গ্রীষ্মে এমনই চর পড়ে পদ্মায়। জঙ্গিপুরে। ফাইল ছবি
গঙ্গার জল বণ্টন নিয়ে ১৯৯৬ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালে। এই আবহে শনিবার নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে ‘ফরাক্কা-গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি’ নবীকরণের জন্য ‘যৌথ কারিগরি কমিটি’ তৈরি করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দু’দেশ জল বণ্টন চুক্তি পুনর্নবীকরণের পথে এক পা এগোল বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে চুক্তি পুনর্নবীকরণ হলেও মালদহ, মুর্শিদাবাদের নদী তীরবর্তী গ্রামগুলিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা ভাঙন সমস্যার সুরাহা হবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
ফরাক্কা ব্যারাজে ১৯৪৯ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত গঙ্গায় গড় জলপ্রবাহ ছিল ১,০৭,৫১৬ কিউসেক। প্রতি বার শুখা মরসুমে কমত জলপ্রবাহ। এপ্রিল মাসের শেষে জলপ্রবাহ কমে দাঁড়াত ৬০,৯৯২ কিউসেকে। ফরাক্কার মূল ব্যারাজ থেকে জল ধুলিয়ান, সুতি, জঙ্গিপুর লালগোলা হয়ে ঢোকে বাংলাদেশে। ফরাক্কা ব্যারাজের পাশ দিয়ে একটি খাল কেটে তার মাধ্যমে ৩৮ কিমি দূরে জঙ্গিপুরে গঙ্গার জল নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ১৯৪৯ থেকে ১৯৮৮ সালের ওই জলপ্রবাহ ধরে ১৯৯৬ সালে বণ্টন চুক্তি হয়েছিল। তারপর কেটে গিয়েছে চার দশক। এক নদী বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘গত চার দশকে প্রতি বছর প্রায় ৮০ কোটি টন পলি ভেসে ফরাক্কা ব্যারাজের আশপাশে জমছে। তাতে ফরাক্কা ব্যারাজের জলধারণ ক্ষমতা অনেক কমেছে।’’
ওই চুক্তি মোতাবেক, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিদিন ৪০ হাজার কিউসেক করে জল পায় ভারত। ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে ফিডার ক্যানাল হয়ে কলকাতা বন্দরে যায় সেই জল। অবশিষ্ট জল মূল ব্যারাজ হয়ে যায় বাংলাদেশে। তবে মার্চ-এপ্রিলে নদীতে জল কমতে শুরু করলে সমস্যা বাড়ে। চুক্তি অনুযায়ী, মার্চ মাসে ২০ দিন বাংলাদেশে ৩৫ হাজার কিউসেক করে জল যায়। পরবর্তী ১০ দিন ভারত পায় একই পরিমাণ জল। এপ্রিলে উল্টো। ওই মাসে ভারত ২০ দিন পায় ৩৫ হাজার কিউসেক জল। বাংলাদেশ শেষ ১০ দিন পাবে একই পরিমাণ জল। বাকি সময় নদীতে যে জলপ্রবাহ থাকবে, তা পাবে দু’দেশই।
জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে জল বণ্টন চুক্তির ফলে ফিডার ক্যানালে জলপ্রবাহ অনেক কমে গিয়েছিল। সে সময় পাশের এনটিপিসি-তে ২,১০০ মেগাওয়াটের ৬টি বিদ্যুৎ ইউনিট জলাভাবে বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমানে এনটিপিসি নিজেরা আলাদা ইনটেক ক্যানাল তৈরি করে জল আগে থেকে ধরে রাখার ব্যবস্থা করেছে। অন্য দিকে, মূল ব্যারাজের জলপ্রবাহ তলানিতে ঠেকার ফলে গঙ্গা এবং পদ্মা জুড়ে গ্রীষ্মকালে প্রচুর চর গজিয়ে ওঠে। গঙ্গার জল সরবরাহের উপর নির্ভরশীল বহু এলাকার বাসিন্দাও ওই সময় তীব্র জলকষ্টে ভোগেন। আবার প্রতি বছর ৩১ মে চুক্তি শেষ হতেই ব্যারাজে আছড়ে পড়ে জলস্রোত। সেই জলের তোড়ে ধুলিয়ান, সুতি, জঙ্গিপুর, লালগোলার বহু গ্রাম ভাঙনের
কবলে পড়ে।
ফরাক্কার তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম রবিবার বলেন, ‘‘ফরাক্কা ব্যারাজ তৈরি এবং জলবণ্টন চুক্তিতে মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষের উপকার তো হয়ইনি, উল্টে নদীতে ভাঙন বেড়েছে। জল চুক্তির সময় এই জেলায় ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে রাজ্য সরকারকে ৭০ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রের। তার কানাকড়িও তারা দেয়নি।’’