—ফাইল চিত্র।
কারও কারও খটকা লেগেছিল গোড়ায়। ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে’র বদলে সংস্কৃত স্তোত্রে ঠিক কী বলছেন, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র! তবে ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে’র চেনা ভাষ্যও শোনা গেল একটু বাদে। কিন্তু ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র যে সিডি বা ইউ টিউব-সংস্করণ আজকাল চাইলেই শোনা যায়, তার সঙ্গে কিছু হেরফের চিহ্নিত করল, কোনও পোড়খাওয়া কান।
ফলে, সাত-সকালে বীরেন ভদ্র, বাণী কুমার, পঙ্কজ মল্লিকদের অবিস্মরণীয় সৃষ্টি আস্বাদের পরেই কিছু তর্ক নেটপাড়ার আলোচনায়। দু’বছর হল অবসর নিয়েছেন আকাশবাণীর তৎকালীন প্রোগ্রাম হেড সৌম্যেন বসু। পুরনো অভ্যাস, এ বারও কাকভোরে রেডিয়োর নব না-ঘুরিয়ে পারেননি তিনি। সৌম্যেনবাবু বলছেন, ‘‘আমি অবসর নেওয়ার বছরেই ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র ১৯৬৬ সালের রেকর্ডিং বাজিয়েছিলাম। ২০১৮, ২০১৯-এও সেটাই বাজল।’’ তবে একটা ফারাক! সৌম্যেনবাবু খেয়াল করেছেন, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ‘তব অচিন্ত্য’ গানটি ওই রেকর্ডিংয়ে সংস্কৃত উচ্চারণে গাওয়া হয়, এ বার সেটা বাংলাতেই শোনা গিয়েছে। আকাশবাণীর একটি সূত্র বলছে, শ্রোতাদের কিছু প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত।
কয়েক বছর আগে ’৬৬র রেকর্ডিংটি শুনে আর এক শ্রোতা তথা বেতার-উপস্থাপক সুপ্রিয় রায় খেয়াল করেন, ওই উপস্থাপনাটিতে বীরেনবাবুর ভাষ্যের অংশ একটু বেশি। ‘ওগো আমার আগমনি’ গানটি নেই। গানগুলিও একটু আলাদা ভাবে সাজানো। আসলে বীরেনবাবু, বাণীকুমার, পঙ্কজ মল্লিকের মতো কিংবদন্তিরা নিজেদের চরম জনপ্রিয় সৃষ্টিকেও কাটছাঁট করতেন, উন্নততর করার চেষ্টা করতেন, বছর-বছর রেকর্ডিংয়ের ধাঁচ পাল্টাত। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার ‘পণ্ডিতেরা’ কেউ কেউ একটু বদল টের পেলেই সমালোচনায় সরব। সৌম্যেনবাবু বলছেন, ‘‘আকাশবাণীর সংগ্রহে সম্ভবত ১৯৬৬ ছাড়াও ১৯৬২ বা আরও পুরনো রেকর্ডিং থাকতে পারে। সাধারণত ১৯৭২-এ সম্পাদিত একটি সংস্করণই বাজানো হতো।’’ আকাশবাণীর ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ আসলে একটি সৃষ্টিশীল অভিযাত্রা। কোনও কোনও শ্রোতার আশা, আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ কখনও অচেনা সংস্করণগুলিকে শোনার সুযোগ করে দিলে সেটাও বড় প্রাপ্তি হবে।