corona virus

বিশ্বের ৩০০ কোটি মানুষের কাছে সাবান, জল বিলাসিতা

কিন্তু সেখানেই যে বড়সড় ফাঁক রয়েছে, ১০-১৪ বছর বয়সি পড়ুয়াদের উপরে করা সমীক্ষা সেটাই দেখিয়ে দিয়েছিল। ওই সমীক্ষায় ৪৭.৩ শতাংশ পড়ুয়া জানিয়েছিল, তারা হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে কখনওই সাবান ব্যবহার করে না।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৫৩
Share:

ফাইল চিত্র

কলকাতার বস্তি ঘুরে পড়ুয়াদের উপরে সমীক্ষাটি করে চমকে উঠেছিলেন গবেষকেরা। জনস্বাস্থ্য নিয়ে যেখানে এত কথা, এত প্রচার, সেখানে সামান্য সাবান ও জল দিয়ে হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে এই অবস্থা! তা-ও কোনও প্রত্যন্ত গ্রামে নয়, খাস কলকাতার বুকে! তখনই তাঁরা আশঙ্কা করেছিলেন, সাবান ও জল দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস তৈরি না হলে যে কোনও মুহূর্তে স্বাস্থ্যে বিপর্যয় নামতে পারে।

Advertisement

কোভিড-১৯ সংক্রমণ সেই আশঙ্কাই আরও দৃঢ় করেছে। অনেক ক্ষেত্রে আশঙ্কা যে সত্যি সেটাও প্রমাণ করেছে। কারণ, এই সংক্রমণ ঠেকানোর অন্যতম অস্ত্র সাবান ও জল। সে কথাই বারবার বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। কিন্তু সেখানেই যে বড়সড় ফাঁক রয়েছে, ১০-১৪ বছর বয়সি পড়ুয়াদের উপরে করা সমীক্ষা সেটাই দেখিয়ে দিয়েছিল। ওই সমীক্ষায় ৪৭.৩ শতাংশ পড়ুয়া জানিয়েছিল, তারা হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে কখনওই সাবান ব্যবহার করে না। ৩০.৯ শতাংশ পড়ুয়া কখনও-সখনও সাবান ব্যবহার করে। আর মাত্র ২১.৮ শতাংশ পড়ুয়া হাত ধুতে সব সময়ে সাবান ব্যবহার করে। গবেষকেরা বুঝতে পেরেছিলেন, বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনের মতো এই সমীক্ষা আসলে সাবান ও জল দিয়ে হাত না ধোয়ার বৃহত্তর চিত্রের প্রতিফলন মাত্র।

ওই সমীক্ষক দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন এপিডিমিয়োলজিস্ট ও জনস্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞ কুণালকান্তি মজুমদার। তিনি জানাচ্ছেন, রাজ্যের জনসংখ্যার একটি বড় অংশই সরবরাহের অপ্রতুলতার কারণে বারবার হাত ধোয়ার জন্য জলের ব্যবহার করতে পারে না। তাঁর কথায়, ‘‘তবে যেখানে জল রয়েছে, সেখানে শুধু সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়াই যথেষ্ট নয়। হাতের উপরে, নীচে, আঙুলের ফাঁকে এ রকম কয়েকটি ধাপে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। তার পরে সেই হাত বাতাসে শুকোতে হবে। কাপড়ে মুছলে হাত ধোয়ার কোনও অর্থ থাকবে না।’’

Advertisement

কেন অর্থ থাকবে না, তার উত্তর সংশ্লিষ্ট সমীক্ষাটি দিয়েছে। পড়ুয়াদের হাতে লেগে থাকা অদৃশ্য কণা (সোয়াব) সংগ্রহ করে দেখা গিয়েছিল, ৬১ শতাংশ পড়ুয়ার হাতেই প্যাথোজেন রয়েছে। যা থেকে শ্বাসযন্ত্র, ত্বক, পেটের রোগ ছড়াতে পারে।
বর্তমান সংক্রমণের প্রেক্ষিতে সাবান ও জল দিয়ে হাত ধোয়া সংক্রান্ত যে রিপোর্ট সম্প্রতি ইউনিসেফ প্রকাশ করেছে, তা শুধু অবিশ্বাস্যই নয়, উদ্বেগেরও। ওই রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে দু’জনের সাবান ও জল দিয়ে হাত ধোয়ার কোনও ব্যবস্থাই নেই! অর্থাৎ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ বা ৩০০ কোটি মানুষের কাছে সাবান ও জল দিয়ে হাত ধোয়া রীতিমতো ‘বিলাসিতা’! উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এক তৃতীয়াংশ স্কুলে হাত ধোয়ার কোনও পরিকাঠামো নেই। যা ৯০ কোটি কমবয়সি পড়ুয়ার স্বাস্থ্যের উপরে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

এই তথ্যের সামনে কিছুটা ‘অসহায়’ অবস্থা ইউনিসেফের। সংস্থা বলছে,— ‘সাবান ও জল দিয়ে বারবার হাত ধোয়া কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকানোর সব থেকে সহজ ও সস্তার উপায়। অথচ কয়েকশো কোটি মানুষ সেটাই করতে পারেন না!’

‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজ়িন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’-এর এপিডিমিয়োলজি বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান শম্পা মিত্র বলেন, ‘‘সাবান ও জল দিয়ে কী ভাবে হাত ধুতে হবে, সেটা প্রয়োজনে হাতেকলমে দেখানো দরকার। কারণ, অনেকেই হাত ধুচ্ছেন বটে। কিন্তু ঠিক মতো হাত ধোয়া না হলে তা না ধোয়ারই শামিল।’’ হাত ধোয়ার অভ্যাসকে একটি নির্দিষ্ট সামাজিক স্তরের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে তা যে সকলের প্রয়োজন, এই সংক্রমণ সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছে বলে জানাচ্ছেন ‘ইন্ডিয়ান সোশিয়োলজিক্যাল সোসাইটি’-র প্রফেসর-গবেষক রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘কোভিড-১৯ অর্থনৈতিক গণ্ডির ভেদাভেদ ভুলিয়ে সকলকে একই সারিতে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। হ্যান্ড-হাইজ়িন সম্পর্কে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকেই সচেতন হওয়ার
প্রাসঙ্গিকতা বুঝিয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement