মানস সাহার পরিবারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। নিজস্ব চিত্র
ভবানীপুরে উপনির্বাচনের প্রচারে এসে সাম্প্রদায়িক অঙ্কে ভোট বিভাজনের আহ্বান জানিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। তিনি এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার শুক্রবার আইসিসিআর-এ ভবানীপুরের গুজরাতি এবং মারওয়াড়ি বাসিন্দাদের একাংশের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে উপস্থিত শ্রোতাদের ভবানীপুরের বিজেপি প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়ালকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্মৃতি বলেন, ‘‘আপনারা এখানে এসেছেন, এটাই আমাদের কাছে বড় পাওনা। আমরা ধরে নিচ্ছি, আপনারা বিজেপিকে সমর্থন করেন বলেই এখানে এসেছেন। আপনারা ৪০%। কিন্তু অনেক সময় ২০% ভোটারের ভোটদানের প্রক্রিয়া এমন হয় যাতে, ৪০%-এর পক্ষে অসুবিধাজনক হয়ে যায়। সুতরাং, আপনারা ভোটের দিন ভোটটা দিতে বাড়ি থেকে বেরোবেন, এই অনুরোধ।’’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, স্মৃতি ২০% বলতে সংখ্যালঘু এবং ৪০% বলতে হিন্দু সম্প্রদায়কে বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ, বিধানসভা ভোটের সময় বিজেপি যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের কৌশল নিয়েছিল, ওই ভোটে পর্যুদস্ত হয়েও সেখান থেকে সরেনি। এ বার ভবানীপুরের উপনির্বাচনেও সেই সাম্প্রদায়িক তাস-ই তাদের হাতিয়ার।
ওই বৈঠকেই আইসিসিআর-এ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত বলেন, ‘‘আপনারা ব্যবসার ক্ষতি হবে ভেবে ভোটের দিন চুপ করে বাড়িতে বসে থাকতে পারেন। কিন্তু আফগানিস্তানের দিকে তাকিয়ে ভবিষ্যৎটা ভেবে নেবেন। আপনার যদি ভূমিই না থাকে, তা হলে মেধা, অর্থ, সম্পত্তি কিছুই বাঁচাতে পারবেন না।’’
তৃণমূল মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায়ের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘বিধানসভা ভোটে সারা রাজ্যে বিজেপি সাম্প্রদায়িক বিভাজনের চেষ্টাই করেছিল। তাতে তৃণমূলের আসন বেড়েছে। কোনও নির্বাচনেই এখানে ভাষা বা ধর্ম বিষয় হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এখানকার ভোটারদের রসায়ন বুঝতে বিজেপির বহু বছর কেটে যাবে। এখানে এই বিভাজন চলে না।’’
বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিনই দাবি করেছেন, ‘‘ভবানীপুর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিততে পারছেন না। তৃণমূলের নেতারা এখন যে ভাবে রাস্তায় নেমে এসেছেন, তা থেকেই এটা স্পষ্ট।’’
বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্রও এ দিন ভবানীপুরের বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রিয়ঙ্কার সমর্থনে প্রচার করেন। পরে মৃত বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের মা ও ভাই এবং মানস সাহার স্ত্রীকে পাশে বসিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন সম্বিৎ। সেখানে অভিজিৎ এবং মানসকে ভোট পরবর্তী ‘হিংসার বলি’ হিসাবে তুলে ধরে ফের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন তিনি।
প্রচার সেরে রাতে উস্তির ইয়ারপুর গ্রামে মগরাহাট (পশ্চিম) কেন্দ্রের নিহত বিজেপি প্রার্থী মানসের বাড়িতে যান স্মৃতি। প্রার্থীর স্ত্রী প্রীতি সাহা ও তাঁর মেয়ে সাথীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্বে এক জন প্রার্থীর যেখানে নিরাপত্তা নেই, সেখানে সাধারণ মানুষের কী হাল?’’