প্রতীকী ছবি
করোনাকালের প্রয়োজনে স্কুল ও মাদ্রাসার কিছু প্রধান শিক্ষককে শুধু ছাত্রছাত্রী নয়, শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও শিক্ষক হয়ে উঠতে হচ্ছে। ল্যাপটপ, স্মার্টফোন ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষকেরা যাতে যথাযথ ভাবে অনলাইনের ক্লাস নিতে পারেন, তৈরি করে নিতে পারেন উপযুক্ত ডিজিটাল ক্লাসরুম, সেই বিষয়ে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ওই সব প্রধান শিক্ষক। ‘কোয়েস্টপিডিয়া’ নামে এই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছেন রাজ্যের বিভিন্ন সরকার পোষিত স্কুল ও মাদ্রাসার ১৫৭ জন প্রধান শিক্ষক।
করোনার দাপটে পড়ুয়ারা প্রায় দু’বছর ধরে স্কুলে বা মাদ্রাসায় যেতে পারছে না। ক্লাসে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মুখোমুখি পাঠগ্রহণ বন্ধ। কালি, কলম, চক, ডাস্টার, ব্ল্যাকবোর্ডের মতো চিরাচরিত শিক্ষণ-উপকরণ ব্যবহারে অভ্যস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাধ্য হয়েই অনলাইনে শিক্ষাদানের জন্য মোবাইল-ল্যাপটপ ব্যবহারে দক্ষ হয়ে উঠতে হচ্ছে। তাঁদের তালিম দিচ্ছেন এই বৈদ্যুতিন প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন প্রধান শিক্ষকেরা। ইতিমধ্যে প্রায় ৪০টি সরকার পোষিত স্কুলের শিক্ষকেরা তালিম পেয়ে স্মার্টফোনেই তৈরি করছেন ‘টিচিং-লার্নিং মেটেরিয়াল’। ব্ল্যাক বোর্ডের বদলে তাঁরা ব্যবহার করছেন গুগ্ল বোর্ড। বহু শিক্ষক এই তালিম নিতে উদ্যোগী হয়েছেন।
এই উদ্যোগে যুক্ত আছেন পূর্ব বর্ধমানের রায়নার শ্যামসুন্দর রামলাল আদর্শ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কল্যাণকুমার তা। তিনি জানাচ্ছেন, যে-সব শিক্ষক-শিক্ষিকা ঠিক ভাবে স্ক্রিনশট নিতে বা ই-মেলে ডকুমেন্ট অ্যাটাচ করতে পারতেন না, এই তালিম পেয়ে তাঁরাই এখন পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন বা ভিডিয়ো এডিটিং করে স্টাডি মেটেরিয়াল বানিয়ে ইউটিউবে এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন।
হুগলির হরিপালের জামাইবাটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ সিংহ জানান, চক-বোর্ড-ডাস্টারের বাইরে যে ভার্চুয়াল জগৎ রয়েছে, শিক্ষকদের সেটা বোঝাতে, সেই বিষয়ে উৎসাহিত করতে সময় লেগেছিল। তবে বিষয়টি বুঝে নিয়ে পরিচিত শিক্ষকদের সঙ্গে গ্ৰুপ তৈরি করে এখন তাঁরাই এই কাজ করছেন। এই কাজে প্রযুক্তিগত সহায়তা করছে কোয়েস্টপিডিয়া।
সন্দীপবাবু বলেন, "শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষকদের জন্য সুনির্দিষ্ট কোর্স মেটেরিয়াল তৈরি করা হয়েছে। যার নাম 'দ্রোণ'। বহু শিক্ষক বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার শিখে অনলাইনে পড়ানোর পাশাপাশি পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অনলাইন পরীক্ষাও নিচ্ছেন।" নতুন প্রজন্মের জন্য আর কী কী শেখা দরকার, সেই বিষয়ে প্রযুক্তিবিদদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সিঙ্গুরের কাছে গজা হাইস্কুল, নালিকুল বালিকা বিদ্যালয়, শান্তিপুরের ভবেন্দ্র ইনস্টিটিউশনের শিক্ষকেরা ঘরে বসেই তৈরি করছেন ডিজিটাল ক্লাসরুম। কোয়েস্টপিডিয়ার অন্যতম মূল উদ্যোক্তা, হাতিশালা হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ইরফান আলি বিশ্বাস জানান, সারা রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা এই ডিজিটাল ট্রেনিং নিতে নাম লেখাচ্ছেন। প্রধান শিক্ষকদের ক্লাসের চেয়ে প্রশাসনিক কাজ বেশি করতে হয়। তাঁদের জন্য রয়েছে আলাদা কোর্স। স্কুল যদি স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরি করতে চায়, সেই বিষয়ে তাঁরা পরামর্শ দিচ্ছেন। এই উদ্যোগে সাহায্যের জন্য ইতিমধ্যেই হাত বাড়িয়েছে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা।