আইনকে বুড়ো আঙুল, বাজার ছেয়ে ছোট ইলিশে

ওজনে বড়জোর ১২০-১৫০ গ্রাম। ঝুড়ি হাতড়ালে মিলবে ১১০-১১৫ গ্রামেরও। দূর থেকে হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে খয়রারই কোনও বড় জাত বা চাপিলা। কিন্তু কাছে গেলে মালুম হবে, সবই আসলে ছোট ইলিশ।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৬ ০২:৫৯
Share:

এ ভাবেই বিকোচ্ছে ছোট ইলিশ। টালিগঞ্জে। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

ওজনে বড়জোর ১২০-১৫০ গ্রাম। ঝুড়ি হাতড়ালে মিলবে ১১০-১১৫ গ্রামেরও। দূর থেকে হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে খয়রারই কোনও বড় জাত বা চাপিলা। কিন্তু কাছে গেলে মালুম হবে, সবই আসলে ছোট ইলিশ।

Advertisement

লাল চোখ, রোগা-পাতলা, তবে কাটলে পরিষ্কার তেল। স্বাদে-গন্ধেও কাজ চলে যাচ্ছে। বঁটির ঘায়ে শরীর-মাথা আলাদা করলে বোঝাই যায়, এই মরসুমে মৎস্যজীবীদের ছোট ফাঁদের জালে ধরা পড়েছে এই ছোট ইলিশের ঝাঁক। দামও বেশি নয়, ২০০-২৫০ টাকা কেজি। শেষ বেলায় দর করলে মিলছে আরও কমেও। জানা গিয়েছে, পাইকারি বাজারে এই ১০০-২০০-২৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিকোচ্ছে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি দরেও। সব মাছ ব্যবসায়ীর কাছেই যে পাওয়া যাচ্ছে, এমন নয়। তবে গত কয়েক দিন ধরে কলকাতার বাজারগুলি ঘুরলে দেখা যাচ্ছে বড়-মাঝারি ইলিশের পাশাপাশি দেদার বিকোচ্ছে এই ছোট ইলিশ। তা মজুত রয়েছে আশপাশের প্রায় সব বড়-মাঝারি পাইকারি বাজারেও। এমনকী ছোট-মাঝারি মাছ বিক্রেতাদের কাছে এ ধরনের ইলিশের চাহিদাও রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। হাওড়া পাইকারি মাছ বাজার কমিটির অন্যতম কর্তা সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ জানাচ্ছেন, প্রতিদিন মোট যে ইলিশ মাছ আসছে তার মধ্যে ১৫-২০ শতাংশই ছোট ইলিশ।

এ দিকে, মৎস্য দফতরের নিয়ম অনুযায়ী ২৩ সেন্টিমিটার অর্থাৎ ৯ ইঞ্চির কম দৈর্ঘ্যের ইলিশ মাছ ধরা, পরিবহণ ও বেচাকেনা একেবারে নিষিদ্ধ। কিন্তু সে সব নিয়মকে তোয়াক্কা না করে ছোট জালে যেমন মাছ ধরাও পড়ছে, তেমনি ছোট ইলিশে ছেয়ে গিয়েছে কলকাতার পাশাপাশি জেলার বাজারগুলিও। মৎস্য ব্যবসায়ীরাই জানাচ্ছেন, রসনা তৃপ্তির জন্য কলকাতার বাজারগুলিতে এক শ্রেণির ক্রেতাদের কাছে কম দামের এই ছোট ইলিশের চাহিদা রয়েছে। তাই আইনের কথা জানলেও মাছ ব্যবসায়ীরাও যেমন ওই ছোট ইলিশ বিক্রি করছেন, এক শ্রেণির ক্রেতারা তা কিনছেনও। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ৪০০ থেকে ৭০০ গ্রামের মাঝারি ইলিশের পাশাপাশি চাহিদা রয়েছে ১৫০-৩০০ গ্রামের ওজনের ছোট ইলিশেরও। কম দামে ছোট ইলিশ কিনে মনের স্বাদ মেটাচ্ছেন, এমন ক্রেতার সংখ্যা যে কলকাতার বাজারে প্রচুর, জানালেন দমদমের এক মৎস্য ব্যবসায়ীও।

Advertisement

জানা গিয়েছে, এ সপ্তাহের শুরু থেকেই ডায়মন্ডহারবার, রায়দিঘি, নামখানা, দিঘা থেকে প্রচুর ছোট ইলিশ ঢুকেছে কলকাতার বাজারে। কলকাতার যে সব ব্যবসায়ী গত দু’তিন সপ্তাহ ধরে ওই সব জায়গা থেকে ইলিশ মাছ নিয়ে আসছেন তাঁদেরই একাংশ জানাচ্ছেন, অনেকের কাছেই ছোট ইলিশ মজুত রয়েছে। বেশির ভাগই লুকিয়ে-চুরিয়ে বিক্রি হচ্ছে। তবে প্রকাশ্যেও যে একেবারে হচ্ছে না তা নয়। অভিযোগ, শহরের বাজারগুলিতে ছোট ইলিশ বিক্রির এই খবর জানেন মৎস্য দফতরের কর্তারাও। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও বাজারে মাছ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে খবর নেই।

ডায়মন্ডহারবার পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী সংগঠনের অন্যতম কর্তা অরবিন্দ মণ্ডলের অবশ্য দাবি, এক শ্রেণির মৎস্যজীবী ছোট ইলিশ ধরেছেন বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা শাসক একটি বৈঠক করেছেন। প্রশাসনিক ভাবে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহও বলেন, ‘‘একেবারেই যে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তা নয়। উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রচুর ছোট ইলিশ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আরও কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, মৎস্যজীবীদের সংগঠনগুলিও মৎস্য দফতরকে অনেক ধরনের তথ্য দিয়ে সাহায্য করছে। কী করে এত মাছ ধরা পড়ল, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে বাজারগুলিতে অভিযান চালিয়ে বিশেষ লাভ হয় না বলেই তিনি মনে করেন। তাঁর কথায়, যেখানে মাছ ধরা পড়ছে, সেখানেই আরও কঠোর হতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement