Education

Education: বাংলার শিক্ষায় শীর্ষে উজ্জ্বল ছয় নারী

সঙ্ঘমিত্রা ছাড়াও এই মুহূর্তে কলকাতার আরও অন্তত পাঁচটি শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে রয়েছেন মহিলারা।

Advertisement

সায়ন্তনী ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২২ ০৭:৫৬
Share:

(উপরের সারির বাঁ দিক থেকে) ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায়, তনুশ্রী সাহা দাশগুপ্ত, সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়। (নীচের সারির বাঁ দিক থেকে) সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুরাধা লোহিয়া, সুমন কুমারী মিশ্র।

‘‘এগোতে এগোতে মেয়েরা যেন এতটাই এগিয়ে যায়, আর পিছনে ফিরে তাকানোর পথ না থাকে। নারী-পুরুষ কিংবা তৃতীয় লিঙ্গভুক্ত মানুষ, সকলের সমান অধিকারই যেন স্বাভাবিক হয়ে যায়। অধিকারের প্রশ্নই আর না থাকে।’’ বক্তা— ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট (আইএসআই)-এর ডিরেক্টর সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

সঙ্ঘমিত্রা ছাড়াও এই মুহূর্তে কলকাতার আরও অন্তত পাঁচটি শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে রয়েছেন মহিলারা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া, এস এন বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেস-এর ডিরেক্টর তনুশ্রী সাহা দাশগুপ্ত, জ়ুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (জ়েডএসআই)-র ডিরেক্টর ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সিএসআইআর-সেন্ট্রাল গ্লাস অ্যান্ড সেরামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর সুমন কুমারী মিশ্র (কারও নাম বাদ পড়লে তা একেবারেই অনিচ্ছাকৃত)।

এ ছাড়াও উল্লেখ্য, ‘ন্যাশনাল অ্যাটলাস অ্যান্ড থিম্যাটিক ম্যাপিং অর্গানাইজ়েশন’ বা ন্যাটমো-র ডিরেক্টর পদ থেকে সদ্য অবসর নিয়েছেন তপতী বন্দ্যোপাধ্যায়। আইআইএম কলকাতার ডিরেক্টর পদে গত বছর পর্যন্ত ছিলেন অঞ্জু শেঠ। এ বছর তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত বছর মেয়াদ ফুরোনোর আগেই তিনি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। সাফল্যের শীর্ষে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা কিন্তু জানাচ্ছেন এই অগ্রগতির বীজ পোঁতা হয়েছিল অন্তত একশো-দেড়শো বছর আগে। বাংলার নবজাগরণ ও মনীষীদের হাত ধরেই এ রাজ্যে নারী শিক্ষা এমন দৃষ্টান্ত গড়েছে। রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কিংবা ঠাকুরবাড়ি, অবদান সকলেরই। গোটা দেশের মেয়েদের জন্য যা অনুপ্রেরণা।

Advertisement

১০৬ বছর বয়স হয়েছে জ়েডএসআই-এর। গত বছর প্রথম ডিরেক্টরের আসনে বসেন কোনও মহিলা। ধৃতির কথায়, ‘‘এতে আলাদা কোনও কৃতিত্ব নেই বা ব্যতিক্রমী কোনও ঘটনা ভাবারও কিছু নেই। সবটাই যোগ্যতার নিরিখে। যে সব মহিলা কোনও প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে রয়েছেন, নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরা কিন্তু নারী ক্ষমতায়নের জোয়ারে ভেসে আসেননি। প্রত্যেকে নিজের জায়গায় শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেই সিংহাসনের দাবিদার হয়েছেন।’’ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তাঁর বার্তা, ‘‘কর্মক্ষেত্রে নিজেকে ছেলে বা মেয়ে হিসেবে আলাদা করে দেখলে চলবে না। মেয়েদের অনেকে নিজেই নিজেকে দুর্বল ভেবে ফেলেন। সব সময়ে সদর্থক ভাবনা জরুরি।’’ তবে কি মেয়েদের আলাদা করে কোনও প্রতিকূলতার মুখে পড়তে হয় না? ধৃতির কথায়, ‘‘যে কোনও কাজের জায়গায় সমস্যা থাকে। আমার আগে যাঁরা এই পদে ছিলেন, তাঁদেরও প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। আমিও হব।’’ আর যদি ঘরে, নিজের পরিবারেই সমস্যায় পড়তে হয়! এখনও বহু বাড়িতে পুত্র ও পুত্রবধূর কাজকে সমান চোখে দেখা হয় না। ধৃতি বলেন, ‘‘পরিবারের সমর্থন থাকা জরুরি। সেটা না-পেলেও পরোয়া করা উচিত নয়। বরং নিজের লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে যেতে হবে। লড়ে যেতে হবে। নেভার সে ডাই!’’

এস এন বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেস-এর প্রথম মহিলা ডিরেক্টর তনুশ্রী সাহা দাশগুপ্তের বক্তব্য, লিঙ্গবৈষম্য অবশ্যই আছে। সেই জন্যই এ বিষয়ে এখনও কথা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘কেউ সচেতন ভাবে বৈষম্য করেন, কেউ অসচেতন ভাবে। কিন্তু বিভেদ করা হয়। ছেলে মানেই তাঁর জীবনের আসল লক্ষ্য উপার্জন। মেয়েটির উপার্জন না করলেও চলে। এটা অনেক সময়ই ছোট থেকে মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এখনও এই ধ্যানধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি অনেকে।’’ তবে তনুশ্রীও বলেন, ‘‘পরিস্থিতি যেমনই হোক, হাল না ছাড়ার পণই লক্ষ্য হওয়া উচিত। ছেলেদের থেকে মেয়েদের অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতা পেরোতে হয়। তাই মেয়েদের আরও দৃঢ়সঙ্কল্প হতে হবে।’’

এ বছরই বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অবদানের জন্য পদ্মশ্রী পেয়েছেন আইএসআই-এর ডিরেক্টর সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাটনগর পুরস্কার বিজয়ীও তিনি। আইএসআই-এর প্রথম মহিলা ডিরেক্টর সঙ্ঘমিত্রা বলেন, ‘‘শহরে মেয়েদের চাকরি করা এখন স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কোনও উঁচু পদে উঠতে হলে, অনেকটা মেহনত প্রয়োজন। সময় ও পরিশ্রম, দু’টোই দরকার। সে জায়গায় মেয়েরা পিছিয়ে পড়েন। সংসার-সন্তান সামলে কেরিয়ারের উন্নতির কথা ভাবার সুযোগ পান খুব কম মেয়ে।’’ সঙ্ঘমিত্রার কথায়, ‘‘এ সব ক্ষেত্রে কোনও বাড়িতে ছেলের জন্য যতটা করা হয়, মেয়ে বা ছেলের বৌয়ের জন্য তা করা হয় না। মেয়েটির কাঁধে অসংখ্য দায়দায়িত্ব চাপানো থাকে। ফলে চাকরি করা হলেও উঁচু পদে কম মেয়েকেই দেখা যায়। ব্যতিক্রম নেই তা নয়। আমিই তার উদাহরণ। কিন্তু এই সমর্থন যদি সব মেয়েই তাঁর বাড়িতে পেতেন, তা হলে আরও বহু মহিলা শীর্ষ পদে কর্মরত থাকতেন।’’ একটি মাত্র শহরে এতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই সময়ে মহিলারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এ ঘটনা কিন্তু একেবারেরই কাকতালীয় নয়, বলছিলেন তনুশ্রী দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘বাঙালি সমাজ চিরকালই আধুনিক। এত দিন ধরে শিক্ষার যে ভিত গড়া হয়েছে, এই ঘটনাতারই প্রতিফলন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement