রাজকোষের হাল ভাল নয় রাজ্যে ।
সরকারি কোষাগারের ছবিটা কেমন, তা শুধু রাজকোষ ঘাটতির হার দিয়েই মাপা যায় না। রাজ্য সরকার নিজে কত আয় করছে, আয়ের টাকা কোথায় বেশি খরচ হচ্ছে, পরিকাঠামো তৈরিতে খরচ হচ্ছে, না কি পুরনো ধারের
সুদ মেটাতেই চলে যাচ্ছে, তা-ও জানা জরুরি।
এই সব খতিয়ে দেখেই বণিকসভা সিআইআই রাজকোষের অবস্থা মাপার একটি সূচক তৈরি করেছে। আর সেই সূচকে সব রাজ্যের শেষে জায়গা পেল পশ্চিমবঙ্গ।
সিআইআই-এর ‘ফিসকাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স’ বলছে, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, হরিয়ানার মতো বেশি আয়ের রাজ্যগুলি যে রাজকোষের এই সূচকে এগিয়ে রয়েছে, তা নয়। বরং মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্র, উত্তরপ্রদেশ সে দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে। এক নম্বরে রয়েছে বিহার।
সিআইআই-এর সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০০৪-০৫ থেকে ২০১৬-১৭ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ-সহ সাতটি রাজ্যের রাজকোষ ঘাটতি নিয়মমাফিক ৩ শতাংশের তুলনায় বেশি ছিল। নবান্নের অর্থ দফতরের কর্তাদের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার সময় ২০১০-১১-তে রাজকোষ ঘাটতি ছিল ৪.২৪ শতাংশ। ২০১৭-১৮-য় তা ২.৮২ শতাংশে নেমে এসেছে। একই সময়কালে রাজস্ব ঘাটতিও ৩.৭৫ থেকে ০.৯৬ শতাংশে নেমেছে।
কিন্তু সিআইআই-এর বক্তব্য, শুধু রাজকোষ ঘাটতি ও রাজস্ব ঘাটতি কমানোয় নজর দিলেই হবে না। রাজকোষের আসল ছবি পেতে তাদের সূচকে অতিরিক্ত চারটি
বিষয় দেখা হয়েছে। এক, রাজ্যের জিডিপির তুলনায় সুদ, ভর্তুকি, পেনশন বাদ দিয়ে রাজস্ব ব্যয়ের হার কত। দুই, জিডিপির তুলনায় পরিকাঠামোয় খরচের হার কত। তিন, জিডিপির তুলনায় নিজস্ব কর বাবদ আয়ের হার কত। চার, জিডিপির তুলনায় মোট ঋণের বোঝা কতটা পরিবর্তন হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র চলতি অর্থ বছরের যে বাজেট পেশ করেছিলেন, তাতে রাজ্যের ঋণের বোঝা বেড়ে প্রায় ৪ লক্ষ ৩২ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছবে বলে অনুমান করা হয়েছিল। রাজ্যের যুক্তি, পুরনো ঋণ শোধ করতে গিয়ে বাজার থেকে চলতি বছরে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে হবে। কারণ, এ বছর রাজ্যকে ৫৬ হাজার কোটি টাকার বেশি পুরনো শোধ করতে হবে। গত অর্থ বছরে পুরনো ঋণের ৪৯ হাজার কোটি টাকার বেশি শোধ করতে হয়েছে। এ দিকে লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে রাজ্য সরকার ছোট চাষিদের জন্য ৫ হাজার বাৎসরিক ভাতার ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্প চালু করেছে। ক্রমশ বেড়ে চলা খরচ সামলাতে
রাজ্য সরকার গত কয়েক বছরে নিজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে। তার পরেও সিআইআই-এর সূচকে এই নিরিখে শেষ দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।