রয়েছে পুলিশি পাহাড়া।—ছবি পিটিআই।
ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার কাজটা শুরু হয়েছে সোমবার সকাল থেকে। নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় রবিবার তাণ্ডব চলেছিল শিয়ালদহ-বজবজ শাখার আক্রা স্টেশনে। আপ ও ডাউন দু’টি ট্রেন দাঁড় করিয়ে সব যাত্রী, চালক ও গার্ডকে নামিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালান বিক্ষোভকারীরা। পূর্ব রেল সূত্রের খবর, এর জেরে এ দিন থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য শিয়ালদহ-বজবজ শাখায় ট্রেন পরিষেবা বন্ধ বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে শিয়ালদহ থেকে বজবজের মধ্যে একটি বিশেষ ট্রেন চালানো হয়। তাতে যাত্রী সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। তার পরে ওই রুটে মোট চারটি ট্রেন চলেছে বলে রেল সূত্রের খবর।
ভাঙচুর চালানো ট্রেন দু’টিকে রবিবার গভীর রাতে অতিরিক্ত ইঞ্জিনের সাহায্যে শিয়ালদহ কারশেডে নিয়ে আসা হয়। এ দিন সকালে আক্রা স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, পরিবেশ থমথমে। সকাল ১০টাতেও প্ল্যাটফর্ম প্রায় জনমানবশূন্য। টহলদারি চালাচ্ছেন আরপিএফের কর্মীরা। স্টেশনের বাইরে মোতায়েন মহেশতলা থানার পুলিশ। রবিবার ভাঙচুর চালানো হয়েছিল বুকিং কাউন্টার-সহ স্টেশন মাস্টারের ঘরে। এ দিন ভাঙা ভেন্টিং মেশিনের অংশগুলি গুছিয়ে রাখছিলেন রেলকর্মীরা। বুকিং কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেল, কয়েক জন রেলকর্মী ছিঁড়ে দেওয়া তার খুলে নতুন তার লাগানোর ব্যবস্থা করছেন। কেবিন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণের তার। সেখানেও নতুন তার লাগানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এক রেলকর্মী বলেন, ‘‘আপাতত কম্পিউটারচালিত টিকিট পরিষেবা চালু করার উপরেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ধাপে ধাপে সবই চালু হবে। তবে সময় লাগবে। অন্তত দিন দুয়েকের আগে কিছুই সম্ভব নয়।’’
আক্রার পরের স্টেশন নুঙ্গিতেও ছবিটা এক। সেখানকার এক ফল বিক্রেতার কথায়, ‘‘প্রায় ১৫ বছর এখানে ব্যবসা করছি। সাধারণত ট্রেনে গোলমাল হলে বিক্ষোভ দেখান যাত্রীরা। কিন্তু রবিবার আক্রা স্টেশনে তাণ্ডব সেই পরিচিত ছবিটাই বদলে দিয়েছে। আতঙ্কে আর ভয়ে চুপ করে গিয়েছেন সকলে।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, শিয়ালদহ-বজবজ শাখায় রোজ যাতায়াত করেন প্রায় দেড় লক্ষ লোক। ওই শাখার ন’টি স্টেশনের মধ্যে লেক গার্ডেন্স, টালিগঞ্জ, নিউ আলিপুর, মাঝেরহাট ও ব্রেসব্রিজ স্টেশন এলাকার বাসিন্দারা বাস ও অটোর মাধ্যমে শহরে পৌঁছতে পারলেও সমস্যায় পড়েছেন সন্তোষপুর, আক্রা, নুঙ্গি ও বজবজ স্টেশন এলাকার যাত্রীরা। কারণ তাঁদের ক্ষেত্রে রেলপথ ছাড়া বিকল্প রাস্তা নেই। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে ট্রেন বন্ধ থাকায় বজবজ ও মহেশতলায় পুরসভা ও বিডিও অফিসে হাজিরা ছিল ৫০ শতাংশেরও নীচে। কাজের জন্য কলকাতায় আসতে পারেননি ওই দুই অঞ্চলের অনেকেই, বিশেষত আনাজ ব্যবসায়ীরা। বজবজের একাধিক তেল সংস্থার অফিসে হাজিরা ছিল অন্য দিনের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।
পরিস্থিতি কবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে, তা নিয়েই এখন গুঞ্জন চলছে মহেশতলা-বজবজে।