সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানোর একটি নথি নিয়ে চাকরিচ্যুত এক ব্যক্তি। মঙ্গলবার শহিদ মিনার ময়দানে। —সারমিন বেগম
চাকরির দাবিতে ধর্না দেখেছে রাজ্য। এ বার হাই কোর্টের নির্দেশে হঠাৎই চাকরি খোয়ানো ব্যক্তিরাও ধর্নায় বসতে চলেছেন। মঙ্গলবার সকালেই চাকরিচ্যুতদের একাংশ শহিদ মিনার চত্বরে জমায়েত শুরু করেন। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ধর্নায় বসে নিজেদের প্রতিবাদ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আদালতের দ্বারস্থও হওয়ার কথা ভাবছেন তাঁরা। সে ক্ষেত্রে কলকাতা হাই কোর্টের সোমবারের চাকরি বাতিলের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে রাজ্য সরকারও।
চাকরিচ্যুতদের বক্তব্য, তাঁরা অবৈধ উপায়ে চাকরি পাননি। তা হলে কেন অবৈধ উপায়ে চাকরি পাওয়া ব্যক্তিদের জন্য তাঁদেরও শাস্তি পেতে হবে?
সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৬ সালের এসএসসির সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দিয়েছে। ২৮২ পাতার এই রায়ের ফলে শিক্ষক পদের পাশাপাশি গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি মিলিয়ে বাতিল হয়েছে মোট ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি। রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বিচারপতি বসাকের মন্তব্য, ‘‘এ ছাড়া (চাকরি বাতিল করা) কোনও উপায় ছিল না।’’
শহিদ মিনারে চাকরিচ্যুতদের জমায়েত। —নিজস্ব চিত্র।
দুই বিচারপতির বেঞ্চ সোমবার আরও জানায়, এসএসসি প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের সুদ-সহ বেতন ফেরত দিতে হবে। সুদের হার হবে বছরে ১২ শতাংশ। চার সপ্তাহের মধ্যে বেতন ফেরত দিতে বলেছে আদালত। এসএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়ার অনেক ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওয়েবসাইটে ইতিমধ্যে আপলোড করা হয়েছে। যেগুলি এখনও আপলোড করা হয়নি, সেগুলি দ্রুত আপলোড করার নির্দেশও দিয়েছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ। জানিয়েছে, উত্তরপত্র জনগণ যাতে দেখতে পান, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে কমিশনকে।
এসএসসি অবশ্য হাই কোর্টের রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। এসএসসির চেয়ারম্যান বলেন, “পাঁচ হাজার জনের বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তার জন্য ২৬ হাজার জনের কেন চাকরি বাতিল হবে?” সোমবার উত্তর দিনাজপুরের জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘যাঁদের চাকরি বাতিল করা হল, চিন্তা করবেন না, হতাশ হবেন না। কেউ জীবনের ঝুঁকি নেবেন না। আমরা পাশে আছি। যত দূর দরকার, লড়াই করব।’’