এনআরসি-র বিরোধিতায় কলকাতা কর্পোরেশন ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ। বুধবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
শীতের রাতে চা-কফি থেকে খাবার এগিয়ে দিয়েছেন হগ মার্কেটের রকমারি দোকানের কর্মচারীরা। প্রতিবাদী স্লোগানে গলা মিলিয়েছেন পথচলতি অনেক মানুষ। খোলা রাস্তায় শতরঞ্চি আর তোষক পেতে অবস্থানে যোগ দিয়েছেন মহিলারা। মানুষের এই সহযোগিতার মনোভাবে ভরসা রেখেই পুলিশি ‘অসহযোগিতা’ অগ্রাহ্য করে কলকাতা পুরসভা চত্বরে আপাতত জারি থাকছে অবস্থান কর্মসূচি। আগামী ৩০ জানুয়ারি মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর মৃত্যুদিবসে ময়দানে তাঁর মূর্তি পর্যন্ত মিছিল করে শেষ হবে এই দফার প্রতিবাদ।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), এনপিআর এবং এনআরসি-র প্রতিবাদে মঙ্গলবার মূলত বামপন্থী নানা গণ-সংগঠনের ডাকে এন্টালির রামলীলা ময়দান থেকে মিছিল নিয়ে এসে কলকাতার পুর-ভবনের গায়ে চ্যাপলিন পার্কের উল্টো দিকে শুরু হয়েছে গণ-অবস্থান। কথা ছিল, সিএএ-মামলায় বুধবার সুপ্রিম কোর্ট কী বলে, তা দেখে নিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা হবে অবস্থান-মঞ্চ থেকেই। সর্বোচ্চ আদালত আরও চার সপ্তাহ পরে ফের শুনানি ধার্য করেছে। প্রতিবাদীরাও জানিয়ে দিয়েছেন, আরও এক সপ্তাহ অবস্থান চালিয়ে ৩০শে ফের মিছিল হবে। আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতে মঙ্গলবার ঘুরে গিয়েছেন সমাজকর্মী মেধা পাটকর। সিপিআই নেতা কানহাইয়া কুমার, পরঞ্জয় গুহঠাকুরতাদের আসার সম্ভাবনা আজ, বৃহস্পতিবার। অবস্থান চললে তিস্তা শীতলবাদ, আনন্দ পট্টবর্ধনদেরও দেখা যেতে পারে ওই চত্বরে।
পুলিশের সঙ্গে টানাপড়েন জারি রেখেই অবশ্য অবস্থান চলছে। রাস্তা আটকে না রাখার নীতি মেনে আজ থেকে এলিট সিনেমার উল্টো দিকে পুরসভার পার্কিং চত্বরে এক চিলতে জায়গা ঘিরে অবস্থান সরিয়ে আনার কথা বলেছেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু পুলিশ বারেবারেই তাঁদের অন্যত্র উঠে যেতে বলছে। বিকল্প জায়গা হিসেবে উদ্যোক্তারা এ দিন এক সময় রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে বসতে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু সেখানে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অনির্দিষ্ট কাল ধর্না চলছে বলে পুলিশ সেই দাবি মানতে নারাজ। উদ্যোক্তাদের তরফে এনআরসি-বিরোধী যুক্ত মঞ্চের আহ্বায়ক প্রসেনজিৎ বসু সাফ বলছেন, ‘‘রানি রাসমণির দু’টো লেন বন্ধ করে শাসক দলের অনির্দিষ্ট কাল ধর্না চলতে পারে। আর আমরা ছোট্ট একটা জায়গায় অবস্থান করতে পারব না? সংবিধান পাহারা দিতে আমাদের অবস্থান চলবে। পুলিশ গ্রেফতার করলে করুক!’’
জনতার এমন আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েই সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম এ দিন বলেন, "সুপ্রিম কোর্টে বিচার পেতে যত বিলম্ব হবে, রাস্তার লড়াই তত জোরালো হবে।"