ফাইল ছবি
রাজ্যের স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির সব মামলাতেই তদন্ত করবে সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে শুধু প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের মামলাতেই ‘সিট’-এর হাতে তদন্তভার দেওয়ার কথা কোর্ট বলেছিল। এ দিন আরও এক ধাপ এগিয়ে সব মামলাই ‘সিট’-এর হাতে দিয়েছে আদালত। তবে ইতিমধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে সিবিআই তদন্তের নির্দেশের বিরোধিতা করে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করেছে রাজ্য। আগামী সোমবার তার শুনানি হতে পারে। এর আগে নবম-দশম এবং শিক্ষাকর্মী মামলাতেও সিবিআই তদন্তের নির্দেশের বিরোধিতা করে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল রাজ্য। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ বহাল রেখেছে।
মামলাকারীদের অন্যতম আইনজীবী ফিরদৌস শামিম শুক্রবার জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী নিয়োগে মোট দশটি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। তাতে এখনও পর্যন্ত মোট পাঁচটি এফআইআর হয়েছে। এ দিনের নির্দেশ অনুযায়ী, সেই সব মামলাই এ বার ‘সিট’ তদন্ত করবে। এ দিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, সিবিআইয়ের যুগ্ম-অধিকর্তা এন বেণুগোপালকে বিশেষ তদন্তকারী দলের প্রধান হিসেবে কাজ
করতে হবে।
শুক্রবার প্রথমে সিবিআইয়ের কৌঁসুলি বিল্বদল ভট্টাচার্য আদালতে জানান, এক জন এসপিকে মাথায় রেখে ৬ সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে। কিন্তু তাতে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। তিনি জানতে চান, কেন কোনও
যুগ্ম-অধিকর্তা পদের অফিসারকে বিশেষ তদন্তকারী দলে রাখা হয়নি? উত্তরে সিবিআই কৌঁসুলি জানান, যুগ্ম-অধিকর্তা পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত। তাঁকে আরও নানা কাজ দেখতে হয়। তাই এই দলে তিনি নেই। তবে তিনি প্রয়োজনে তত্ত্বাবধান করবেন। সেই যুক্তি অবশ্য মানতে চাননি বিচারপতি। তিনি মন্তব্য করেন, “তা হলে উপেনবাবুকে (তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাস, যিনি এই মামলাতেও যুক্ত আছেন) দায়িত্ব দেব? তা ভাল হবে তো?” তার পরেই বিচারপতি জানান, সিবিআই কৌঁসুলিকে ১০ মিনিটের মধ্যে মক্কেলের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে কোর্টকে অবহিত করতে হবে। শেষে এ ব্যাপারে লিখিত নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতি।
রাজ্যে স্কুলে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী নিয়োগে প্রভূত দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে বড় রকমের অনিয়মও আদালতে কার্যত প্রমাণ হয়েছে। রাজ্যের খোদ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষিকা পদে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষাকর্মী নিয়োগে আদালত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের নেতৃত্বাধীন কমিটিকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দিয়েছিল। সেই কমিটি শুধু অনিয়মের কথাই বলেনি, দুর্নীতি এবং অপরাধের কথাও রিপোর্টে জানিয়েছে। ওই কমিটির রিপোর্টে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ-সহ একাধিক পদস্থ কর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি পদক্ষেপের সুপারিশ করেছে। এই মামলাগুলিতে নাম জড়িয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা বর্তমান শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও।
এই পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই মনে করছেন, এই নিয়োগ দুর্নীতির শিকড় বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় কোনও কর্তার নেতৃত্বে ‘সিট’ হতে পারে। তবে গত বুধবার আদালত যে নির্দেশ দিয়েছিল তাতে বলা হয়েছে, এই ‘সিট’ হাই কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত করবে এবং কোর্টের অনুমতি ভিন্ন সিট-এর সদস্যদের বদলি করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে যুগ্ম-অধিকর্তা ‘সিট’-এ যুক্ত হলে তাঁর কার্যকলাপ এবং বদলিও কোর্টের অধীনে চলে আসতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।