আচমকা কাঁথির মাজারে উপস্থিত এলাকার সাংসদ শিশির অধিকারী।
আচমকা কাঁথির মাজারে উপস্থিত এলাকার সাংসদ শিশির অধিকারী। পরিচয়ে যিনি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর পিতাও বটে। শুক্রবারের এমন ছবি প্রকাশ্যে আসতেই শিশিরকে আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ‘তোষণ’-এর অভিযোগ তুলে বার বার নানা ‘বাক্যবাণ’ এবং ‘বিশেষণ’ ব্যবহার করেন শুভেন্দু। সেই প্রসঙ্গ তুলেই শুভেন্দু-পিতাকে এ বার ‘খোঁটা’ দিল জোড়াফুল শিবির। যদিও, তৃণমূলের এই আক্রমণে ক্ষুব্ধ শিশির। তবে তাঁর এই মাজার পরিদর্শনে রাজনীতির কিছু দেখছে না স্থানীয় বিজেপি।
শুক্রবার কাঁথি শহরের দারুয়া আস্তানা মাজারে যান শিশির। সেখানে চাদর চড়ান তিনি। সেই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয় রাজনৈতিক তরজা। স্থানীয় তৃণমূল শিবিরের প্রশ্ন, এত দিন শুভেন্দু নানা সভা-সমিতিতে সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে ‘কটূক্তির বন্যা’ বইয়ে দিয়েছেন, সেখানে মাজারের মতো জায়গায় শুভেন্দু-পিতা হাজির হলেন কেন? কাঁথি এক নম্বর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রদীপ গায়েন বলছেন, ‘‘সামনেই কাঁথি পুরসভার নির্বাচন। তাই ভোট প্রচার করতে বেরিয়ে পড়েছেন উনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকলকে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে থাকার জন্যই বার্তা দিয়েছেন বার বার। কিন্তু ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীকে যে ভাবে শুভেন্দু আক্রমণ করেছিলেন, সেটা কি শিশিরবাবু ভুলে গিয়েছেন? মুখ্যমন্ত্রীকে কখনও ‘বেগম’, ‘বাংলাদেশের ফুফু’ বলেছেন। এ সব করে ভোট পাওয়া যাবে না।’’
তৃণমূলের আক্রমণে ক্ষুব্ধ শিশির। খাতায়কলমে তিনি এখনও তৃণমূলের সাংসদ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি ৬০-৬২ বছর রাজনীতি করছি। আমি কখন মাজারে যাব বা কখন মন্দিরে যাব তা নিয়ে কাউকে কোনও উত্তর দেব না। আমি যখন মাজারে যাই তখন যাঁরা ছিলেন তাঁরা সকলে দেখেছেন। এ নিয়ে কারও কোনও সমীকরণ থাকতে পারে। তবে আমার কোনও মাথাব্যথা নেই। বয়স্ক লোককে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা বন্ধ হোক।’’
শিশিরের মাজার-দর্শন নিয়ে বিজেপি-র কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অনুপকুমার চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘কাঁথির সব ধর্মের মানুষকেই সমৃদ্ধ করেছেন শিশির। সনাতন ধর্মের সংস্কৃতিকে বজায় রেখেই যদি অন্যদের সংস্কৃতি এগিয়ে চলে তা হলে কোনও সমস্যা নেই। তাই মাজারে যাওয়ার মধ্যে অযথা রাজনীতি খোঁজার চেষ্টা বৃথা।’’
মাজারে গিয়ে চাদর চড়ান শিশির।
শুক্রবার রাতে কাঁথির সাংসদ যে মাজারে গিয়েছিলেন তার সভাপতি শেখ ওমর ফারুক যদিও বলছেন, ‘‘মাজার একটি ধর্মীয় স্থান। এখানকার দরজা সকলের জন্য খোলা। তবে শিশিরবাবুকে সামনে পেয়ে কয়েক জন অনুরোধ করেছেন, ‘দয়া করে ছেলে শুভেন্দুকে বোঝান। উনি যে ভাষায় ক্রমাগত সংখ্যালঘুদের কটূক্তি করেন তা খুবই বেদনাদায়ক। এর ফলে সম্প্রীতির ভাবমূর্তি ক্রমাগত নষ্ট হচ্ছে। আপনি বাড়ির অভিভাবক, আপনি বোঝালে নিশ্চয়ই ছেলে শুনবে।’ এ কথাই আমরা ওঁকে জানিয়েছি।’’