হোগলায় ঢেকে জমি, চাষ দূর, সিঙ্গুরকে চেনাই দায়

বেড়াবেড়ি পঞ্চায়েতের বিদায়ী উপপ্রধান দুধকুমার ধাড়াও মানছেন, ‘‘আমার জমিরই কাগজপত্র বা সীমানা নির্ধারণ হয়নি। চাষ ওখানে করা গেলে তো!’’

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ০২:৫১
Share:

—ফাইল চিত্র।

মশকরা! গরগরে রাগ আর উদাস চোখ নিয়ে জমির দিকে তাকিয়ে থাকেন বেড়াবেড়ির মধুসূদন বারুই।

Advertisement

সহজে দ্রুত বীজতলা পুঁততে সরকার যন্ত্র দিয়েছে সদ্য। খুশি তো দূর, মধুসূদনবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কী হবে এই মেশিন দিয়ে? সরকার কি আমাদের সমস্যা বুঝবে না?’’ বাজেমিলিয়ার কুশ ধাড়ার প্রশ্ন, ‘‘চাষটা করব কোথায়?’’ বেড়াবেড়ি পঞ্চায়েতের বিদায়ী উপপ্রধান দুধকুমার ধাড়াও মানছেন, ‘‘আমার জমিরই কাগজপত্র বা সীমানা নির্ধারণ হয়নি। চাষ ওখানে করা গেলে তো!’’

আদালত জমি ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে। তাকে ফের চাষযোগ্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সিঙ্গুরের এক সময়ের তিন ফসলি জমির বেশিরভাগই এখন ঢেকে হোগলা আর উলুখাগড়ায়। গত বর্ষায় আল ধুয়ে মিলেমিশে একাকার। এক জমিদাতা বলছিলেন, ‘‘জমিই চেনা যায় না, তো চাষ।’’ আর এক জনের আক্ষেপ, ‘‘কারখানাও হল না, জলে গেল চাষও।’’ হাঁড়ি কী ভাবে চড়বে, তা নিয়ে সিঙ্গুর আতান্তরে। ইচ্ছুক-অনিচ্ছুকের দড়ি টানাটানিও আর প্রায় নেই। রোজগারে টান প্রায় সকলকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে একই বিন্দুতে।

Advertisement

অনেকে বলছেন, ‘‘আগে ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা থেকে বিয়ে— সব কিছু এই জমির জোরে সামলেছি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আলাদা। শীতের আলু এ জমিতে হয়নি। বর্ষার আমনই বা হবে কী ভাবে?’’

আরও পড়ুন: ন্যানো না থাক, কাজ আছে সানন্দের কারখানায়

সিঙ্গুর এখন

• জমি অধিগ্রহণ অবৈধ ছিল বলে ২০১৬ সালের অগস্টে রায় সুপ্রিম কোর্টের। জমি ফেরাতে নির্দেশ।

• জমিকে ফের চাষযোগ্য করে তুলতে মাঠে নামে রাজ্য সরকার।

• কিন্তু এখনও বেশিরভাগ জমিই চাষের অযোগ্য। উলুখাগড়া আর হোগলায় ঢাকা। চাষ সামান্য কিছু বিচ্ছিন্ন জমিতে।

• গত বর্ষায় ধুয়ে গিয়েছে প্রায় সব আল। নিজের জমি চেনাই দায়।

• অনিচ্ছুকদের ভরসা মাসে ১৬ কেজি চাল আর ২,০০০ টাকা।

• কারখানার জন্য প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন প্রায় ৫০ জন। টাটারা সিঙ্গুর ছাড়ায় তাঁরা হতাশ।

• না হল কারখানা, না চাষ হচ্ছে জমিতে— সিঙ্গুর আতান্তরে। একই বিন্দুতে ইচ্ছুক-অনিচ্ছুকরা।

২০১৬ সালের শেষে তা-ও পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ হয়েছিল। কিন্তু গত বর্ষায় ধুয়ে যাওয়া আল সেই ছবি পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে।

প্রধান কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারের অবশ্য দাবি, ‘প্যাডি ট্রান্সপ্ল্যান্টার’ যন্ত্রে চাষ সহজ হবে। ফের জমি চিহ্নিত করার কাজ শুরু করবে সরকার। কিন্তু চাষিরা বলছেন, আগে জমি ফিরুক, তবে তো চাষ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement