বৃহস্পতিবার, কাঞ্চনজঙ্ঘা ক্রীড়াঙ্গন পরিদর্শনে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব, দার্জিলিং জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, পুলিশ কমিশনার সহ পুর্ত দফতরের আধিকারিকেরা। ছবিঃ স্বরূপ সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাহাড় ও সমতল মিলিয়ে উত্তরবঙ্গ সফরকে ঘিরে প্রশাসনিক প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু হল। মাস ছয়েক পরে, মুখ্যমন্ত্রী ডিসেম্বরের প্রথমে উত্তরবঙ্গে আসবেন বলে গত কয়েক দিন ধরেই প্রশাসনিক মহলে খবর ভাসছে। শেষ পর্যায়ে অদলবদল না হলে, মুখ্যমন্ত্রী ৬-১২ ডিসেম্বর উত্তরবঙ্গে থাকতে পারেন। দার্জিলিং জেলার কার্শিয়াং দিয়ে শুরু হয়ে, শিলিগুড়ির সভা দিয়ে সফর শেষ হতে পারে। চা বাগিচা, পর্যটন শিল্প, পাহাড়ের পরিস্থিতি এবং কালিম্পঙের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে ত্রাণ, নতুন করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কাজ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী খোঁজখবর নিতে পারেন বলে প্রশাসনিক স্তরে কাজকর্ম শুরু হয়েছে। সে সঙ্গে সভাগুলি থেকে সরকারি সাহায্য, প্রকল্পের কিছু ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী করতে পারেন বলেও অনুমান প্রশাসন সূত্রের।
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর সভার সম্ভাব্য দু’টি এলাকা পুলিশ-প্রশাসনের অফিসারেরা ঘুরে দেখেন। শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম এবং বাগডোগরার উত্তরার মাঠ দেখা হয়েছে। স্টেডিয়ামে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবও ছিলেন। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর সফর নিয়ে মেয়র কিছুই বলতে চাননি। প্রশাসনিক আর একটি সূত্রের খবর, ৬-৭ ডিসেম্বরের বদলে মুখ্যমন্ত্রীর ১০ ডিসেম্বর বা ১১ ডিসেম্বরও আসতে পারেন। যদিও বৃহস্পতিবার রাত অবধি কোনও সরকারি নির্দেশ নবান্ন থেকে এসে পৌছায়নি।
রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সফরসূচি এখনও সরকারি ভাবে আসেনি। তিনি ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে আসছেন, তা মোটামুটি ঠিক। সে মতো প্রস্তুতি হচ্ছে।’’ তিনি জানান, একই সময়ে তৃণমূলের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আসছেন। তিনি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ৪-৮ ডিসেম্বর অবধি কার্শিয়াঙে থাকবেন। ৭ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে একটি বাণিজ্য সম্মেলন বা পর্যটন ‘কনক্লেভ’ হতে পারে। মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী তা নিয়ে জেলাশাসকদের সঙ্গে ভিডিয়ো-বৈঠকও করেছেন।
পক্ষান্তরে, তৃণমূল সূত্রের খবর, আগামী তিন মাসের মধ্যে লোকসভা ভোটের ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। এ বার কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং লোকসভা আসনে তৃণমূলের বিশেষ নজর রয়েছে। পাহাড়ের গোর্খা, সমতলে রাজবংশীদের মন জুগিয়ে চলার চেষ্টা চলছে। এর বাইরে, বিরাট চা বলয়ে ঘিরে নানা পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ‘চা সুন্দরী’র মতো আবাস প্রকল্প থেকে শুরু করে বাগানে জমির পাট্টা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতি ক্ষেত্রেই অবশ্য কিছু সমস্যা সামনে এসেছে। চা শিল্পের অবস্থাও খুব একটা ভাল বলে ধরা হচ্ছে না। এই অবস্থায় বিরাট চা বলয়ে লোকসভার আগে কী করা যেতে পারে তা মুখ্যমন্ত্রী জানেন। বুধবার রাজ্যের মন্ত্রিগোষ্ঠী চা শিল্প নিয়ে আলাদা করে বৈঠক করেছে।
মুখ্যমন্ত্রী সভাগুলি থেকে পাহাড় ও চা শিল্প নিয়ে বার্তা দেবেন, তা অনুমান হচ্ছে। এর পরেই উত্তরবঙ্গের পর্যটন। বেশ কিছু দিন ধরে তা নিয়ে সরকারি স্তরে পর্যালোচনা বৈঠকও হয়নি। যা নিয়ে নবান্নের শীর্ষ স্তরে অসন্তোষও রয়েছে বলে সূত্রের দাবি। তাই মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সময় ‘কনক্লেভ’ করার পরিকল্পনা তৈরি করছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা।