তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ জিতেন্দ্র এবং শীলভদ্রের। ফাইল চিত্র।
আগেই ঘোষণা করেছিলেন, আগামী বিধানসভা ভোটে আর তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়াবেন না। সেই জল্পনা সত্যি করে শুক্রবার দল ছাড়লেন ব্যারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে চিঠি লিখে তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি। তবে দল ছাড়লেও বিধায়ক পদ এখনই ছাড়ছেন না শীলভদ্র। শুভেন্দু অধিকারী, জিতেন্দ্র তিওয়ারি, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পর দলত্যাগী হলেন শীলভদ্রও।
আসানসোলের প্রাক্তন পুর-প্রশাসক জিতেন্দ্র শুক্রবার সকালে সস্ত্রীক কলকাতা রওনা দিয়েছেন। জিতেন্দ্র-ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, তিনি শুক্রবার সারাদিন কলকাতায় থাকবেন। শনিবার মেদিনীপুরে অমিত শাহের সভায় যাওয়ার কথা তাঁর। সেখানে তিনি বিজেপি-তে যোগদান করতে পারেন। যদিও জিতেন্দ্র নিজে বলেছেন, এখনই তিনি বিজেপি-তে যাচ্ছেন না। তাঁর যোগদানের বিরোধিতায় প্রকাশ্যেই সরব হয়েছেন আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। এই আবহে জিতেন্দ্রর কলকাতায় আগমন নিয়ে নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে। প্রসঙ্গত, জিতেন্দ্র তাঁর সরকারি নিরাপত্তা কমিয়ে দিয়েছেন। ছেড়ে দিয়েছেন পাইলট কারও। সরকারি নীলবাতির গাড়ি তিনি আগেই ছেড়ে দিয়েছিলেন। শুক্রবার আসানসোল বাসস্ট্যান্ডে জিতেন্দ্রর বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়। তাঁর ছবি মাটিতে রেখে তাতে কালি লাগানো হয়। ছবিতে আগুনও লাগানো হয়। জিতেন্দ্র ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, ওই বিক্ষোভের পিছনে আছে তৃণমূল।
দল ছাড়লেও বিধায়কপদ ছাড়ছেন না কেন শীলভদ্র? ব্যারাকপুরের প্রবীণ বিধায়ক বলেছেন, ‘‘আমি মানুষের সঙ্গে থেকে মানুষের হয়ে কাজ করতে চাই। তাই এখনই বিধায়কপদ ছাড়ছি না। মানুষের ভোটে জিতেছি। এখন চলে গেলে সেই সব মানুষ কী করবেন! তবে মানুষ যদি বলেন, তা হলে বিধায়কপদও ছেড়ে দিতে পারি।’’ সূত্রের খবর, দলত্যাগের পরই শীলভদ্রের অফিস থেকে সরে গিয়েছে মমতার ছবি। তার জায়গায় রাখা হয়েছে স্বামী বিবেকানন্দের ছবি। অফিসে প্রাধান্য পেয়েছে গেরুয়া রংও। এ সবই ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে। এ-ও মনে করা হচ্ছে, শীলভদ্রওর বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন। অমিত-সভায় তিনিও থাকতে পারেন বলে খবর।
আরও পড়ুন: জিতেন্দ্রকে মেনে নিতে পারব না, ফেসবুকে তোপ দাগলেন বাবুল
তৃণমূলের ‘বিক্ষুব্ধ’দের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন শীলভদ্র। ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের ভূমিকায় সরাসরি প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। ঘোষণা করেছিলেন, এ বার তৃণমূলের টিকিটে আর ভোটে লড়বেন না। তার পর থেকে গত কয়েক দিনে তাঁর দলত্যাগ এবং বিজেপি-তে যোগদানের জল্পনা আরও জোরালো হয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। গোপালনগরে মুখ্যন্ত্রীর সভাতেও তাঁকে দেখা যায়নি। তারপর বিজেপি-র সহ-সভাপতি মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করেন শীলভদ্র।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে লিভার প্রতিস্থাপন হয়েছিল শীলভদ্রর। চিকিৎসায় বিপুল খরচ হয়েছিল। সেই ব্যয়ভার মেটাতে তৃণমূলের বিভিন্ন নেতার কাছ থেকে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা ধার করেছিলেন শীলভদ্র। বৃহস্পতিবার সেই টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন তিনি। তখনই স্পষ্ট হয়েছিল, তাঁর দলত্যাগ সময়ের অপেক্ষা।
আরও পড়ুন: তৃণমূল ছাড়লেন প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ, পদ্মে জায়গা নয়, বিক্ষোভ বিজেপির