Air Traffic Management

আকাশের চাবি শ্যামলীর হাতে

সে দিনের শ্যামলী হালদার এখন কলকাতার এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট (এটিএম)-এর জেনারেল ম্যানেজার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:৪০
Share:

শ্যামলী হালদার

আঠাশ বছর আগের স্মৃতি এখনও অমলিন! কলকাতা থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দূরের আকাশে আচমকাই পথ হারিয়ে ফেলেছেন রাশিয়ান পাইলট। দিশাহারা অবস্থায় তিনি যোগাযোগ করেছেন কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-র সঙ্গে। কিন্তু গেরো বেধেছে ভাষা নিয়ে। এটিসি-র ইংরেজির উত্তরে পাইলট রুশ ভাষায় উত্তর দিয়ে চলেছেন। পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে এটিসি-র চেয়ারে বসে ঘেমেনেয়ে অস্থির প্রশিক্ষণরত অফিসার শ্যামলী। সিনিয়রের অবস্থাও তথৈবচ।

Advertisement

সে দিন কিছুতেই এরোফ্লোট সংস্থার বিমানকে কলকাতার রানওয়েতে নামাতে পারেননি শ্যামলী হালদার ও তাঁর সিনিয়র সহকর্মী। শেষমেশ বারাসতের ধানজমিতে ছোট অ্যান্টোনভ বিমানকে নামিয়েছিলেন পাইলট। তবে সব যাত্রীই অক্ষত ছিলেন।

আঠাশ বছরে কলকাতার আকাশ দিয়ে উড়ে গিয়েছে বহু বিমান এবং সে দিনের শ্যামলী হালদার এখন কলকাতার এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট (এটিএম)-এর জেনারেল ম্যানেজার। ভারতে তিনিই এই পদে প্রথম মহিলা। দিল্লি থেকে এটিএম-এর এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর কল্যাণ চৌধুরী বলেন, “১৯৭৩ সালে আমাদের পেশায় প্রথম মহিলা অফিসার আসেন। তার পর থেকে আরও বেশ কয়েক জন এসেছেন। কিন্তু, তাঁদের মধ্যে সবাই কিছু দিন পরে চাকরি ছেড়ে দেন। কেউ অন্য দফতরে বদলি হয়ে যান। শ্যামলী টিঁকে যায়। যেটাকে আমরা এটিসি টিম বলি, ও-ই তার প্রথম মহিলা নেত্রী।”

Advertisement

আরও পড়ুন: চাহিদার শীর্ষে স্বাস্থ্যসাথী, ভিড়ে দঃ ২৪ পরগনা

বিমানবন্দরে বসে আকাশে প্রতিটি বিমানের গতিবিধি নজরে রাখা এটিসি অফিসারদের কাজ। এটিসি-র নির্দেশ ছাড়া আকাশে পাইলটেরা কার্যত অন্ধ। বিমানবন্দর থেকে ওঠা এবং নেমে আসা, পুরোটা সময়েই পাইলট ও এটিসি অফিসারের এই সামঞ্জস্য যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছতে সাহায্য করে।

শ্যামলীদেবীর কথায়, “১৯৯২ সালের সেই ঘটনার পর তিন রাত ঘুমোতে পারিনি। আমার চাকরি জীবনের শুরুতে ওই ঝটকা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।” এটিসি অফিসারের চাকরিতে ভুল হওয়া মানেই বসিয়ে দিয়ে তদন্ত চালু। ৩১ বছরের পেশাগত জীবনে এখনও একবারের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত হয়নি বলেও জানান শ্যামলীদেবী।

বাবা ছিলেন নাগপুরে, আকাশবানীর অফিসার। শ্যামলীদেবীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা সেই শহরেই। সেখানকার নিয়ম মেনেই বাবার নাম দিয়ে নিজের নামকরণ, শ্যামলী দিগম্বর হালদার। তাঁর কথায়, “আমার যাবতীয় সার্টিফিকেট সহ নথিতে ওই নামটাই রয়েছে।” বলছেন, তাঁর বাবা ছিলেন নিয়মনিষ্ঠ, মানসিক ভাবে শক্তিশালী মানুষ। সেই সব গুণ উত্তরাধিকার সূত্রেই পেয়েছেন তিনি। এই চাকরিতে আসার ঘটনারও ‘গল্প আছে। ১৯৯০ সালে তিনটি চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু বিনি পয়সায় বিমানের পাস পাওয়া যাবে এই মনে করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের চাকরিতে যোগ দেন।

আরও পড়ুন: সরকারি কর্মীদের জন্য জানুয়ারিতে ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণা মমতার

দেশের বিভিন্ন শহরে এটিসি অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন। ‘সিঙ্গল মাদার’ হিসেবে ঘুরে বেড়িয়েছেন একমাত্র মেয়েকে নিয়ে। এর আগে কলকাতাতেও এটিসি অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বলেন, “প্রতিটি মানুষের জীবনে, পেশায় সমস্যা আসেই। সেই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে আমি বেশি সময় নিই না।”

এটিসি-কর্তারা বলছেন, আগে এই চাকরিতে মহিলা অনেক কম ছিল। কিন্তু এখন কালের নিয়মেই এটিসি-তে থাকছেন আগামী দিনের বহু ‘শ্যামলী’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement