মমতার প্রশংসায় শুভা।
মাঝে তিন দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু ২৫শে বৈশাখ উদ্যাপনের সরকারি মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর ‘নিরলস সাহিত্য সাধনার’ জন্য বিশেষ বাংলা আকাদেমি পুরস্কারের পরে আলোচনা, বিতর্ক এখনও অব্যাহত। বাংলা আকাদেমির সভাপতি, নাট্যব্যক্তিত্ব তথা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং আকাদেমি সদস্য কবি সুবোধ সরকার এই পুরস্কারের যৌক্তিকতা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই সরব। বুধবার তাঁদের হয়ে ব্যাট ধরতে দেখা গেল চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্নকেও।
শুভাপ্রসন্ন মমতার ছবির অনুরাগী হিসেবে পরিচিত। বছর দশেক আগে টাউন হলে মুখ্যমন্ত্রীর ছবির প্রদর্শনীর সময় থেকেই তাঁর তুলির বলিষ্ঠ মোচড় এবং সরল উপস্থাপনার অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন এই চিত্রশিল্পী। এ দিন তিনি ফের মমতার প্রশংসায় মুখর। একটি টিভি চ্যানেলের প্রশ্নের জবাবে শুভাপ্রসন্ন বলেন, “রবীন্দ্রনাথ থাকলে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এসে মমতাকে সংবর্ধনা দিতেন। রবীন্দ্রনাথ এঁদের মতো ঈর্ষাকাতর ছিলেন না।”
আবার এ দিনই মমতাকে ‘নিরলস সাহিত্য সাধনার’ জন্য পুরস্কার দান বাংলা আকাদেমির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছে বলে প্রতিবাদপত্র প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট জনেরা। তাতে শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, মালিনী ভট্টাচার্য, মিহির ভট্টাচার্য, আজিজুল হক প্রমুখের নাম রয়েছে। কাদের মতামতের ভিত্তিতে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তার সবিস্তার বিবৃতি প্রকাশের আর্জি জানিয়েছেন এই স্বাক্ষরকারীরা।
বাংলা আকাদেমির অন্যতম সদস্য বলে পরিচিত সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের পুত্র অবশ্য সমাজমাধ্যমে জানিয়েছেন, তাঁর বাবা বয়সজনিত কারণে এখন কোনও সরকারি কমিটিতে নেই। রাজ্য প্রশাসনের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ২৫শে বৈশাখের আগে বাংলা আকাদেমির কমিটির ভিতরের একটি কমিটি বা বিচারক মণ্ডলী বৈঠক করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। মুখ্যমন্ত্রীকে তা জানানোও হয়। এবং তাঁর সম্মতিক্রমে রবীন্দ্রজয়ন্তীতে রবীন্দ্র পুরস্কারের মঞ্চেই এই পুরস্কার দেওয়া হয়। তবে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মুখ্যমন্ত্রীর কবিতা বিতান বইটিকে স্মরণে রেখে পুরস্কার দেওয়া হলেও, কোনও বই নিয়ে পুরস্কার সংক্রান্ত কমিটিতে আলোচনা হয়নি। সূত্রের দাবি, মূলত দু’তিন জনের তৎপরতায় বিষয়টি নিয়ে ঝটপট সিদ্ধান্ত হয়। বাংলা আকাদেমির কয়েক জন এখন পুরস্কারটিকে একাধারে সামাজিক কর্মকাণ্ড ও সাহিত্যের জন্য নির্দিষ্ট ম্যাগসাইসাই স্বীকৃতির সঙ্গে তুলনা করা শুরু করেছেন।
বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ এ দিন বাঁকুড়ায় বলেন, ‘‘কেউ পুরস্কার পায়, কেউ দেয়। মুখ্যমন্ত্রী পুরস্কার নেন। যাকে তিনি ভিসি করছেন, তিনি তাঁকে পিএইচডি দিচ্ছেন। যাঁকে তিনি সাহিত্য আকাদেমিতে পাঠাচ্ছেন, তিনি তাঁকে পুরস্কার দিচ্ছেন। তবে সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন প্রতিবাদ করেছেন, এটা শুভ লক্ষণ।’’