রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ফাইল চিত্র।
আরও বড় সঙ্ঘাতের আশঙ্কা রাজভবন এবং বিকাশ ভবনের মধ্যে। আচার্যকে কিছুই না জানিয়ে সমাবর্তন কী ভাবে? এই প্রশ্ন তুলে কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে শো কজ নোটিস পাঠালেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। উপাচার্যকে বরখাস্ত করা যায় কি না, তা বিবেচনার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন রাজ্যপাল, এমনও জানানো হল রাজভবনের তরফে।
আগামী কাল অর্থাৎ শুক্রবার কোচবিহারের পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন হওয়ার কথা। তার ঠিক আগের দিনই উপাচার্যকে শো কজ করলেন আচার্য।
উত্তরবঙ্গের এই বিশ্ববিদ্যালয়টির সমাবর্তন ঘিরে বিতর্ক গত কয়েক দিন ধরেই চলছিল। সমাবর্তনের আমন্ত্রণপত্রে আচার্য তথা রাজ্যপালের নাম নেই কেন? এই প্রশ্নই উঠেছিল সর্বাগ্রে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিলেন, রাজ্যপালকে সমাবর্তনের বিষয়ে জানানো হয়েছে, তবে কোনও উত্তর মেলেনি। কিন্তু রাজ্যপাল উষ্মা প্রকাশ করে অভিযোগ করেন, সমাবর্তনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে কিছুই জানাননি। উষ্মা এ বার বদলে গেল পদক্ষেপে। উপাচার্যকে শো কজ করলেন রাজ্যপাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ভাঙার দায়ে তাঁকে কেন বরখাস্ত করা হবে না, ১৪ দিনের মধ্যে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য উপাচার্যকে নির্দেশ দিলেন আচার্য। মেল, ফ্যাক্স এবং ডাকযোগে এই শো কজ নোটিস আজ, বৃহস্পতিবার উপাচার্যকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে রাজভবন জানিয়েছে।
শো কজের চিঠিতে রাজ্যপাল লিখেছেন যে, ১৪ ফেব্রুয়ারি কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। কিন্তু তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা কোর্টের সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও উপাচার্য তাঁকে সমাবর্তনের বিষয়ে কিছুই জানাননি। ২০১২ সালের যে আইনের বলে কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছিল, সেই আইনের বিভিন্ন ধারা শো কজ নোটিসে তুলে ধরেছেন রাজ্যপাল। আইন অনুযায়ী সমাবর্তনের অন্তত ১৪ দিন আগে তা রাজ্যপাল তথা আচার্যকে জানাতে হবে। কিন্তু সমাবর্তন যে দিন হওয়ার কথা বলে তিনি জেনেছেন, তার আগের দিনও উপাচার্য তাঁকে কিছুই জানাননি বলে লিখেছেন ধনখড়। এই ভাবে সমাবর্তনের আয়োজন করে আচার্য পদটির সম্মান নষ্ট করা হয়েছে বলেও লেখা হয়েছে শো কজ নোটিসে।
যে চিঠি এ দিন রাজভবন পাঠিয়েছে কোচবিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে, তার বয়ান অত্যন্ত কড়া। উপাচার্য নিজের ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করেছেন এবং ‘উপাচার্য পদে তিনি বহাল থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে’— এমনই লিখেছেন রাজ্যপাল।
রাজ্যপালের শো কজ চিঠি। নিজস্ব চিত্র।
তবে শো কজ নোটিসে এ-ও লেখা হয়েছে যে, আইন অনুযায়ী কারণ দর্শানোর জন্য উপাচার্যের ১৪ দিন সময় পাওয়া উচিত। সেই সময় উপাচার্যকে দেওয়া হচ্ছে। লিখিত ভাবে উত্তর দিতে না চেয়ে উপাচার্য যদি মৌখিক ভাবে উত্তর দিতে চান, তার অবকাশও রয়েছে বলে চিঠিতে জানিয়েছেন রাজ্যপাল। সে ক্ষেত্রে ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টেয় রাজভবনে তিনি রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। উপাচার্য দেবকুমার মুখোপাধ্যায়কে এমনই জানিয়েছেন রাজ্যপাল।
আরও পড়ুন: বাদুড়িয়ায় ‘কলেজ’ খুলে প্রশিক্ষণ, প্রৌঢ়দের ‘বাংলা গ্যাং’ ত্রাস পূর্ব উপকূলের ট্রেনে
জগদীপ ধনখড় এ রাজ্যের রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকে রাজভবনের সঙ্গে নানা বিষয়েই নবান্নের সঙ্ঘাত শুরু হয়েছে। তবে শিক্ষা ক্ষেত্রেই সঙ্ঘাতের ঘটনা সবচেয়ে বেশি। কখনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যপালকে ঢুকতে না দেওয়া, কখনও রাজ্যপালের সফর জেনেও বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে উপাচার্য এবং কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতি— এমন নানা বিষয় নিয়ে বার বার সঙ্ঘাত তৈরি হয়েছে। রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্র নিয়ে বার বার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল আর তার পাল্টা জবাব পেয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। ধনখড়ের সঙ্গে পার্থর বাগ্যুদ্ধ প্রায় নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিরন্তর চলতে থাকা সেই সঙ্ঘাতেই নতুন পর্ব যোগ করেছিল পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন। রাজ্যপাল ফের ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। কিন্তু এ বার উপাচার্যের বিরুদ্ধে যে রকম পদক্ষেপ রাজ্যপাল করলেন, তাতে সঙ্ঘাত আরও উচ্চগ্রামে পৌঁছনোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।