গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বিক্ষোভে ইতি টেনে শুক্রবারই দলের প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করেছিলেন বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। শনিবার বেলা গড়াতেই দলের প্রতি তাঁর অটুট আস্থার কথা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন শতাব্দী। পোস্টে ‘বীরভূমের নাগরিকদের প্রতি’ শতাব্দী জানিয়েছেন, ‘আজ একটি পোস্ট করব বলেছিলাম। এই লেখার মাধ্যমে আমার বক্তব্য জানাচ্ছি’। ওই পোস্টে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর অটুট আস্থার কথাও জানিয়েছেন শতাব্দী।
নিজের বক্তব্যে শতাব্দী লিখেছেন, ‘আমাকে কয়েকজন প্রশ্ন করছিলেন কেন এলাকার বহু কর্মসূচিতে আমাকে দেখা যাচ্ছে না। অথচ আমি তো চাই এলাকার মানুষের পাশে থাকতে। কিছু সমস্যা হচ্ছে। কিছু যন্ত্রণা অনুভব করছিলাম। চেষ্টা করছি সব বাধা টপকে এলাকায় সবসময় থাকার’। অভিষেকের সঙ্গে বৈঠকের পর সেই যন্ত্রণা যে অনেকটাই কেটেছে এবং পরিস্থিতি ‘ইতিবাচক’, তা-ও জানিয়েছেন এই অভিনেত্রী-সাংসদ। জানিয়েছেন, ‘বিষয়টি ফেসবুকের মাধ্যমে জানিয়েছিলাম আপনাদের। এই সূত্রেই কিছু বহুমুখী ঘটনা ঘটছিল। শেষ পর্যন্ত তৃণমূল পরিবারের প্রিয় নেতা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার সবিস্তারে আলোচনা হয়েছে। আমি সমস্যার জায়গাগুলি জানিয়েছি। তিনিও শুনেছেন এবং আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনা ইতিবাচক। সমস্যার সমাধান হবে বলে আমি আশাবাদী’।
ডায়মন্ডহারবার সাংসদ অভিষেকের এ হেন মধ্যস্থতায় তাঁকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন শতাব্দী। তিনি লিখেছেন, ‘আমি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ দিচ্ছি। যেভাবে তিনি সমস্যা শুনেছেন, আলোচনা করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, তাতে আমি নিশ্চিত, তরুণ নেতাটি এখন যথেষ্ট দায়িত্বশীল ও পরিণত। নতুন প্রজন্মের এমন নেতার নেতৃত্ব দলকে শক্তিশালী করবে’। প্রসঙ্গত, শনিবারই তাঁর ‘সিদ্ধান্ত’ জানিয়ে দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল শতাব্দীর। শোনা যাচ্ছিল, তিনি দেখা করতে পারেন অমিত শাহের সঙ্গে। যে সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেননি শতাব্দী নিজেও। তবে দিনের শেষে তিনি আবার তৃণমূলেই।
আরও পড়ুন: জনতা কার্ফু এবং থালা-বাটি বাজানোর পক্ষে এত দিন পর যুক্তি দিলেন মোদী
প্রসঙ্গত, শনিবার দিল্লি যাওয়ার কর্মসূচি শুক্রবারেই বাতিল করেছিলেন শতাব্দী। রবিবার তাঁর যাওয়ার কথা রামপুরহাটে। তার পর বুধবার সপরিবার গোয়ায় ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন বীরভূমের সাংসদ। ফেরার কথা ২৫ তারিখ। তার পর থেকেই তিনি নিজের কেন্দ্রে ভোটের কাজে নেমে পড়বেন। বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙঅগে প্রথম থেকেই বনিবনা হয়নি শতাব্দীর। কিন্তু তবুও তিনি এতদিন অন্য কোনও দলের সঙ্গে সংশ্রবের কথা ভাবেননি। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাঁকে নিয়ে জল্পনা চলছিল। সেই জল্পনাতেই ইন্ধন দিয়ে তিনি একটি ফেসবুক পোস্ট করেন। তবে তিনি কখনওই সরাসরি বলেননি যে, বিজেপি-তে যোগ দেবেন। শতাব্দীর ক্ষোভের খবর পেয়েই তৎপর হন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় ফোনে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে কথা বলেন তাঁর সঙ্গে। তাঁর ক্ষোভ নিয়ে শতাব্দীকে দলের সঙ্গে আলোচনা করার পরামর্শ দেন সৌগত। প্রাক্তন সাংসদ তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ শতাব্দীর বাডি়তে চলে যান। তার পর তাঁকে নিয়ে যান অভিষেকের দফতরে। সেখানেই বরফ গলে এবং শতাব্দী বিধানসভা ভোটে দলের হয়ে নিয়োজিতপ্রাণ থাকার কথা জানিয়ে দেন।
প্রত্যাশিত ভাবেই শনিবারের ফেসবুক পোস্টে আগামী বিধানসভা ভোটের কথা উল্লেখ করেছেন শতাব্দী। তিনি লিখেছেন, ‘সামনে নির্বাচন। যাঁরা তৃণমূলের কর্মী বা নেতা, আমার মতোই তাঁদের কিছু ক্ষোভ বা বক্তব্য থাকতেই পারে। আমরা সেগুলি দলের মধ্যেই মেটাব। ভোটে জয়ের পর পর্যালোচনা করব। এখন সবাই হাতে-হাত মিলিয়ে লড়াই করার সময়। আসুন, সবাই মমতা’দির নেতৃত্বে তৃতীয় তৃণমূল সরকার গঠনের লক্ষ্যে বাংলার স্বার্থে কাজ করি’। পাশাপাশিই শতাব্দী লিখেছেন, ‘আমি যখন তৃণমূলে এসেছিলাম, তখন সিঙ্গুর আন্দোলন চলছে। দল ক্ষমতায় নেই। কঠিন সন্ধিক্ষণ। শুধু দলকে ভালোবেসে, মমতা’দিকে ভালোবেসে আমি এসেছিলাম। আজ আবার যখন সবাই বঙ্গ রাজনীতির সন্ধিক্ষণ বলছেন, তখন আমরা দলের মঞ্চ থেকেই লড়াই করার কর্তব্য থেকে পিছিয়ে যাব না’।
আরও পড়ুন: টিকাকরণের শুরুতে রাজ্যে ফেল কেন্দ্রের অ্যাপ, তথ্য হাতেকলমে
পোস্টের শেষে বীরভূমের তিনবারের সাংসদ লিখেছেন, ‘সর্ব স্তরের তৃণমূল পরিবারের সদস্যদের আবার বলছি, যদি কারও কোনও ক্ষোভ থাকে, এতদিন যখন সেসব নিয়ে পথ চলেছি, এখন ভোটের মুখে প্রতিপক্ষের সুবিধা করে না দিয়ে আসুন, বাংলার স্বার্থে আমরা গোটা তৃণমূল পরিবার এক হয়ে লড়াই করি’।