দিনভর সবুজেই মুক্তির স্বাদ খুঁজছেন রহমান

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, এক বছরে একশোটি গাছ লাগাতে হবে রহমানকে (নাম পরিবর্তিত)। সেটাই তাঁর মুক্তির অন্যতম শর্ত। রহমান এখন তাই দিনভর চারাগাছ নিয়ে ছুটছেন। তিনি বলছেন, ‘‘এক বছরের আগেই একশোটি গাছ লাগিয়ে ফেলব।’’ 

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শক্তিপুর শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৯ ০৩:৪৩
Share:

শক্তিপুর থানা চত্বরে গাছ লাগাচ্ছেন রহমান। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক

চেনা চারাগাছ, চেনা বর্ষার মাটি, চেনা খুরপি। বদলে গিয়েছে শুধু কারণটা! সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, এক বছরে একশোটি গাছ লাগাতে হবে রহমানকে (নাম পরিবর্তিত)। সেটাই তাঁর মুক্তির অন্যতম শর্ত। রহমান এখন তাই দিনভর চারাগাছ নিয়ে ছুটছেন। তিনি বলছেন, ‘‘এক বছরের আগেই একশোটি গাছ লাগিয়ে ফেলব।’’

Advertisement

রহমানের কথাটা কিন্তু মোটেই কথার কথা নয়। সোমবার বহরমপুর থেকে গাঁটের টাকা খরচ করে একশোটি গাছের চারা কিনে এনেছেন তিনি। মঙ্গলবার শক্তিপুর থানায় ২০টি, শক্তিপুর কুমার মহিমচন্দ্র ইনস্টিটিউশনে ১৫টি, নবগ্রাম-কাটাইকোনা নিম্নবুনিয়াদি বিদ্যালয় ও নবগ্রাম কাটাইকোনা জুনিয়র হাইস্কুলে ২৭টি চারাগাছ লাগিয়েছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৪ সালে রেজিনগর (এখন শক্তিপুর) থানার কাটাইকোনা গ্রামে জমি নিয়ে গন্ডগোল হয়। অভিযোগ, রহমান, তাঁর বাবা ও এক মামা প্রতিবেশী আব্দুল মান্নান শেখের উপর আক্রমণ করেন। মান্নান ভোজালির কোপে গুরুতর জখম হন। ওই ঘটনায় রহমান-সহ ওই তিন জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা হয়।

Advertisement

২০০৮ সালে রহমানের বাবা শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পেলেও রহমান ও তাঁর মামাকে তিন বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় জেলা আদালত। হাইকোর্টও একই শাস্তি বহাল রাখে। পরে রহমান সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। গত জানুয়ারি মাসে জেলা আদালতে আত্মসমর্পণও করেন তিনি। তখন থেকে তিনি বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেই বন্দি ছিলেন।

পুলিশ জানায়, ২০০৪ সালে ঘটনার সময় রহমানের বয়স ছিল ১৬ বছর ৭ মাস ২৮ দিন। অর্থাৎ রহমান তখন নাবালক। এই
বিষয়টি সামনে এনে রহমান সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন, তাঁর সাজা মকুব করা হোক। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও ও বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তের বেঞ্চ গত ১২ জুলাই রহমানকে মুক্তির নির্দেশ দিয়ে জানিয়েছে, তাঁকে বছরে একশোটি গাছ লাগাতে হবে। জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সুপারিশে এই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

পরিবেশপ্রেমীরা জানাচ্ছেন, খুনের চেষ্টার মামলায় শাস্তি মকুব করে এমন গাছ লাগানোর ‘সাজা’ দেওয়া বেশ অভিনব। তবে ২০০৪ সালের ওই গন্ডগোলে জখম আব্দুল মান্নান শেখ বলছেন, ‘‘খুনের চেষ্টার মামলায় গাছ লাগানো কি কোনও শাস্তি হল? গাছ তো আমরাও লাগাতে পারি!’’

শক্তিপুর কুমার মহিমচন্দ্র ইনস্টিটিউশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মহম্মদ শফিকুল আলম বলছেন, ‘‘রহমান আমাদের বিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কথা জানিয়ে ও আমাদের বিদ্যালয় চত্বরে গাছ লাগিয়েছে।’’ শক্তিপুর থানার পুলিশও জানিয়েছে, রায়ের কপি নিয়ে রহমান গাছ লাগাবেন বলে এসেছিলেন। থানা চত্বরের ফাঁকা জায়গায় তিনি গাছ লাগিয়েছেন। পড়ন্ত বিকেলে থানার কলে হাতের কাদা ধুতে ধুতে রহমান বলছেন, ‘‘বন্দি থাকার যন্ত্রণা আমি জানি। এই সবুজ চারাগাছগুলোই আমাকে মুক্তির স্বাদ দিয়েছে। দেখবেন, আমি ওদের দেখভাল করে ঠিক বড় করে তুলব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement