North Bengal

উত্তরবঙ্গের বহু নদীতে বাড়ছে জল, আশঙ্কাও 

সিকিম প্রশাসনের তরফে উত্তর সিকিমের উপরের অংশে নজরদারি বাড়িয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মঙ্গন জেলা জুড়ে আবহাওয়া দফতরের তরফে ‘কমলা সতর্কতা’ জারি রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪ ০৮:০৬
Share:

সিকিম ও কালিম্পংগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের পরিস্থিতি। — নিজস্ব চিত্র।

পাহাড় ও সমতলে বৃষ্টির জেরে উত্তরবঙ্গ জুড়ে একাধিক নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। এই পরিস্থিতিতে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে উত্তরের সব জেলাতেই। পাশাপাশি, সিকিমে বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা নদীতে নতুন করে জলস্ফীতির কারণে সিকিম, কালিম্পং পাহাড় ও জলপাইগুড়ির পরিস্থিতিও ক্রমশ উদ্বেগজনক হয়ে পড়ছে। উদ্বেগ দার্জিলিঙের বিভিন্ন এলাকা নিয়েও। এ দিকে, বহু জায়গায় ধসের জেরে রবিবারও সিকিম, কালিম্পংগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক পুরোপুরি বন্ধ ছিল।

Advertisement

সিকিম প্রশাসনের তরফে উত্তর সিকিমের উপরের অংশে নজরদারি বাড়িয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মঙ্গন জেলা জুড়ে আবহাওয়া দফতরের তরফে ‘কমলা সতর্কতা’ জারি রয়েছে। পাকিয়ং, নামচি জেলায় অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে। এতে তিস্তায় আরও জল বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দার্জিলিং থেকে কালিম্পংগামী তিস্তাবাজার রোডের উপর দিয়ে কিছু জায়গায় নতুন করে জল বইছে। নদীপারের সাতটি বাড়ি তিস্তার গ্রাসের মুখে। আবহাওয়া দফতরের সিকিম ও উত্তরবঙ্গের মুখপাত্র গোপীনাথ রাহা এ দিন বলেন, “মৌসুমি অক্ষরেখার অবস্থান পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টির তারতম্য হবে।”

প্রশাসন সূত্রের খবর, শ্বেতিঝোরা থেকে চিত্রে অবধি পাহাড় কেটে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রাস্তা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন পূর্ত দফতরের কর্মীরা। আবার রবিঝোরা থেকে তিস্তাবাজারেও কাজ চলছে। আবার কালিম্পঙের দিক থেকে ৭১৭এ জাতীয় সড়ক বারবোটে থেকে চুইখিম হয়ে বাগরাকোট অবধি ধসের কারণে বন্ধ। কালিম্পঙের জেলাশাসক বালসুব্রহ্মণ্যন টি বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনের তরফে পরিস্থিতির উপর টানা নজর রাখা হচ্ছে। মুনসুং, লাভার রুটে ঘুরপথে গাড়ি চলাচল করছে।’’ দার্জিলিঙের দিকের পরিস্থিতিও খারাপ হচ্ছে। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিংগামী ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কের পাগলাঝোরার নতুুন করে রাস্তা বসে যাচ্ছে। একাধিক জায়গায় ফাটলের পর রাস্তা বসা শুরু হয়েছে। রোহিণী রোড হয়েই গাড়ি চলছে। ঝোরার জল বেড়ে যাওয়ায় দার্জিলিঙের রক গার্ডেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

জলপাইগুড়িতে তিস্তা এখনও বিপদসীমার কাছাকাছি। গত বছর সিকিমে বিপর্যয়ের জেরে সমতলে, বিশেষ করে জলপাইগুড়িতে তিস্তার খাত উঁচু হয়েছে। এর ফলে কয়েক মাস ধরে তার অভিমুখও বদলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। নিজের খাত ছেড়ে কোথাও ডান দিক, কোথাও বাঁ দিক দিয়ে বইছে। এখন বৃষ্টি বাড়ায় আরও বিপদে পড়েছে সেচ দফতর। দফতরের মুখ্য বাস্তুকার (উত্তর-পূর্ব) কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, “পরিস্থিতি খারাপই। তিস্তাকে সামলানোই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদী নিজের খাত ছেড়ে গ্রামে ঢুকে পড়ছে। অর্থাৎ নদীর যেখান দিয়ে বয়ে যাওয়ার কথা সেখানে জল কম, কিন্তু যেখানে গ্রাম সে দিকেই নদী সরে যাচ্ছে।” কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের একাধিক নদীতে জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। কোচবিহারে তোর্সা, মানসাই, রায়ডাক নদীর জলে অন্তত দশটি গ্রাম জলবন্দি। পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ সঙ্কটে। আলিপুরদুয়ারের ক্রান্তি এলাকাতেও দু’শোর বেশি পরিবার জলবন্দি। প্রশাসন সূত্রে খবর, তিস্তা, মানসাই ও রায়ডাক নদীতে ‘হলুদ সতর্কতা’ রয়েছে।

অন্য দিকে, উপরের দিকে ভারী বৃষ্টির জেরে মালদহ ও দুই দিনাজপুরের নদীগুলিতে জলস্ফীতি দেখা দিয়েছে। গৌড়বঙ্গ জুড়ে বৃষ্টিও চলছে। নদীপারের বাসিন্দারা বন্যার আশঙ্কায় রয়েছেন। মালদহে গঙ্গা ও ফুলহারের জল কমতে শুরু করলেও হু-হু করে বাড়ছে মহানন্দার জল। রতুয়া-১ ব্লকের ভাসারামটোলায় ফুলহার নদীর ভাঙন অব্যাহত। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় পুনর্ভবা নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। উত্তর দিনাজপুর জেলার কুলিক, টাঙন ও নাগর নদীর জল বেড়েছে। কালিয়াগঞ্জে টাঙন নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় বেশ কয়েকটি গ্রামে জল ঢুকেছে বলে খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement