TMC

২০২৫ সালে ২৫ দফা দাবি তৃণমূলের

পঁচিশ দফার মধ্যে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে বরখাস্ত হওয়া সাংসদের সংখ্যা ১৩ গুণ বাড়ার কথা। ইডির মামলার ৯৫ শতাংশ বিরোধী দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে করার প্রসঙ্গ।

Advertisement

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৫০
Share:

— প্রতীকী চিত্র।

বর্ষবরণের আগে মোদী সরকারের সামনে পঁচিশ দফার ফর্দ হাজির করলেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের দাবি, ২০২৫ শেষ হওয়ার আগে এই পঁচিশ দফা ‘কর্তব্য’ অতি অবশ্যই পালন করে দেখাক বিজেপি সরকার। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, বছরের শুরুতেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে বুঝিয়ে দেওয়া হল, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগের বছরটিতে বিজেপির সঙ্গে সমস্ত বিষয়ে লড়াই করবে তারা। পাশাপাশি এই বার্তাও দেওয়া হল, সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধিতার নিজস্ব অবস্থান নিয়ে চলবে তৃণমূল।

Advertisement

প্রসঙ্গত শীতকালীন অধিবেশনে তৃণমূল প্রথম সরব হওয়ার পরে বিভিন্ন অকংগ্রেসি দলই বিরোধী মঞ্চের ‘মুখ’ হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নিয়েছে। তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অম্বেডকর প্রসঙ্গে পৃথক ধর্না করে স্পষ্ট বলেছেন, “কংগ্রেসের কথায় ওঠবোস করব না। তারা ছড়ি ঘোরাবে এটা হতে পারে না।” রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এই ২৫ দফায় বিরোধিতার প্রশ্নে নিজেদের আধিপত্য স্পষ্ট করে রাখল তৃণমূল।

এই পঁচিশ দফায় যেমন রয়েছে বিদেশি বিনিয়োগ টানতে জোর, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বাড়ানো, সকলের জন্য খাদ্যের জোগান, সকলের জন্য সমান মজুরি, কৃষকদের উন্নতির মতো বিষয়। পাশাপাশি রয়েছে লোকসভায় দ্রুত ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন, সংবাদমাধ্যমের সুরক্ষা, সহনশীলতা বাড়ানো, তফসিলি জাতি-জনজাতি, ওবিসি কল্যাণ, সংখ্যালঘু সুরক্ষার প্রশ্নগুলি।

Advertisement

তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন প্রস্তুত করেছেন এই পঁচিশ দফা প্রস্তাব। তাঁর কথায়, “জুলিয়াস সিজ়ারের সেনেট যখন ১ জানুয়ারিকে বছরের প্রথম দিন হিসেবে স্থির করল, তখন শুধু এটাই লক্ষ্য ছিল না যে নতুন করে সব কিছু শুরু করা হবে। তখনও এটিই ধার্য ছিল যে বকেয়া সব কর্তব্যকেও নতুন বছরে শেষ করা হবে। ২০২৫-এর মধ্যে এই পঁচিশটি কাজকে অগ্রাধিকার দিয়ে অবশ্যই শেষ করতে হবে কেন্দ্রকে।”

পঁচিশ দফার মধ্যে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে বরখাস্ত হওয়া সাংসদের সংখ্যা ১৩ গুণ বাড়ার কথা। ইডির মামলার ৯৫ শতাংশ বিরোধী দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে করার প্রসঙ্গ। দাবি, নতুন বছরে সরকার যেন বিরোধী স্বরকে দাবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা না করে। ডেরেকের কথায়, “পিছিয়ে পড়া শ্রেণি কমিশন, তফসিলি জাতি কমিশন, জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের কোনও ভাইস চেয়ারম্যান নেই। ২০২৪ সালের মার্চের হিসাব অনুযায়ী ১০টি কস্তুরবা গান্ধী বালিকা বিদ্যালয় অচল হয়ে আছে। জুলাইয়ের হিসাবে ৫টি একলব্য স্কুল তালাবন্ধ।”

ডেরেক বলেন, “জাতীয় অপরাধপঞ্জি ২০২১ সালে সাম্প্রদায়িক অশান্তির ৩৭৮টি ঘটনা নথিবদ্ধ করে দেশ জুড়ে। বাইশে তা দাঁড়িয়েছে ২৭২-এ। ২০২৩ সালে ভারতবাসী দেখেছেন নথিভুক্ত হওয়া ৬৬৮টি ঘৃণা-ভাষণ শুধু একটি সম্প্রদায়েরই বিরুদ্ধে। নতুন বছরে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের সংখ্যালঘু নিরাপত্তার এবং কল্যাণের ব্যবস্থা করুক। পাশাপাশি মণিপুরে এক বছরেরও বেশি হিংসা চলছে। প্রধানমন্ত্রী এক বারও সেখানে গিয়ে উঠতে পারলেন না।” সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ তুলে তাঁর বক্তব্য, “২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ২০০টি ঘটনায় সাংবাদিকদের উপরে গুরুতর আক্রমণ হয়েছে, গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে, তাঁদের জেরার মুখে পড়তে হয়েছে। শুধু ২০২২ সালেই ১৯৪ জন সাংবাদিক নিশানা করা হয়েছে।”

সংসদীয় অধিবেশনে তুলতে না পারলেও গত দেড় বছর ধরে লাগাতার রাজ্যের প্রতি অর্থনৈতিক বঞ্চনা এবং আর্থিক অবরোধের অভিযোগে সরব থেকেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সে কথা মনে করিয়ে ডেরেক বলেন, “একশো দিনের কাজ এবং আবাস যোজনায় দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি কেন্দ্রীয় বকেয়া রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এই টাকা না দেওয়ার ফলে ৫৯ লক্ষ কর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement