মাও-ভয়েই ‘লোকালে’ নজরদারি জঙ্গলমহলে

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রের খবর, স্থানীয় স্তরের সমস্যা ও মাওবাদী তৎপরতা— এই দুইয়ের কার্য-কারণ সম্পর্ক মাথায় রেখেই ঝাড়গ্রাম সফরে জেলা পুলিশ-প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৮ ০৬:৩১
Share:

প্রতীকী ছবি।

স্বাধীনতা দিবসের আগে বাড়তি নিরাপত্তা প্রতি বছরই থাকে। তবে এ বার জঙ্গলমহলের সুরক্ষায় নজর যেন একটু বেশিই।

Advertisement

ঝাড়গ্রামের জঙ্গল এলাকায় মোড়ে মোড়ে নাকা, তল্লাশির পাশাপাশি বেলপাহাড়ি, কাঁকরাঝোরের ঝাড়খণ্ড সীমানা এলাকা ও নয়াগ্রামের ওড়িশা সীমানায় বাড়তি নজর রাখা হয়েছে। সমান্তরাল ভাবে সাদা পোশাকেও গাঁ-গঞ্জে পুলিশি নজরদারি চলছে। কোথাও সামান্যতম ক্ষোভ দানা বাঁধছে কিনা, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসন সূত্রে খবর, এই নজরদারি এখন চলবে।

গত ৯ অগস্ট ঝাড়গ্রামে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরোক্ষে স্বীকার করেন, বেলপাহাড়ির মতো এলাকায় মাওবাদী তৎপরতা বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে বিজেপি-র মদতের অভিযোগ করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি জঙ্গলমহলের মানুষের কাছে তাঁর আর্জি ছিল, ‘লোকালি কোনও সমস্যা হলে বলবেন। সংশোধন করে নেবো।’

Advertisement

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রের খবর, স্থানীয় স্তরের সমস্যা ও মাওবাদী তৎপরতা— এই দুইয়ের কার্য-কারণ সম্পর্ক মাথায় রেখেই ঝাড়গ্রাম সফরে জেলা পুলিশ-প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ, একেবারে স্থানীয় স্তরের ছোটখাটো সমস্যা বা সাধারণ ক্ষোভ-বিক্ষোভের আড়ালে মাওবাদী ইন্ধন থাকতে পারে। সেই মতো জেলার ৮টি ব্লকেই নজর রাখছে পুলিশ-প্রশাসন।

এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে জঙ্গলমহলে তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কে ধাক্কা লেগেছে। তৃণমূলের অন্দরে ফলাফল পর্যালোচনায় স্বজনপোষণ, দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে। তারপর থেকে ঝাড়গ্রামে দলীয় সংগঠন ঢেলে সাজা, নেতৃত্বে রদবদল, প্রশাসনের মাধ্যমে উন্নয়নের জোর— সবই শুরু করেছে শাসকদল। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো ‘লোকাল’ সমস্যায় নজর রাখাও শুরু হয়েছে।

গোয়েন্দাদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বাম আমলের শেষে আদিবাসীদের ক্ষোভ-বঞ্চনা, জনপ্রতিনিধিদের আর্থিক দুর্নীতিকে পুঁজি করেই জঙ্গলমহলে জনভিত্তি তৈরি করেছিল মাওবাদীরা। তার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে জন্য তৎপর বর্তমান শাসকদল। বিরোধীরা অবশ্য বিঁধতে ছাড়ছে না। বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথীর কথায়, ‘‘দলের নেতা-কর্মীদের সীমাহীন দুর্নীতির ফলেই জঙ্গলমহলে তৃণমূল জনসমর্থন হারিয়ে ফেলেছে। তাই এখন মুখ্যমন্ত্রীর ঝুলি থেকে মাওবাদী বেড়াল বেরোচ্ছে।’’ আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চের নেতা বাবলু মুর্মু আবার বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের উন্নয়ন থেকে আদিবাসীদের দূরে রাখতেই আমাদের মাওবাদী তকমা দেওয়া শুরু হয়েছে।’’

তৃণমূল নেতৃত্বের গলায় পাল্টা অভিযোগের সুর। দলের ঝাড়গ্রাম জেলা চেয়ারম্যান সুকুমার হাঁসদা বলেন, ‘‘জঙ্গলমহলের উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে কিছু বিরোধী অপপ্রচার করে অশান্তির দিন ফেরানোর চেষ্টা করছে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আরও উন্নয়ন করে আমরা জবাব দেব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement