Corona Vaccine

দ্বিতীয় ডোজ শুধু সরকারি কেন্দ্রেই? ধোঁয়াশা

এ বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনের সুস্পষ্ট নির্দেশিকা না-মিললেও শুক্রবার পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের এক নির্দেশিকা অনুযায়ী ব্যাপারটা তেমনই দাঁড়াচ্ছে বলে কলকাতার অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালের অভিমত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২১ ০৬:৪০
Share:

কলকাতার এক পুরকর্মীকে প্রতিষেধক। শুক্রবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

বেসরকারি হাসপাতালে মিলবে না। প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ় নিতে যেতে হবে সরকারি হাসপাতালে।

Advertisement

এ বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনের সুস্পষ্ট নির্দেশিকা না-মিললেও শুক্রবার পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের এক নির্দেশিকা অনুযায়ী ব্যাপারটা তেমনই দাঁড়াচ্ছে বলে কলকাতার অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালের অভিমত।

ওই নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ঘোষিত নীতি অনুযায়ী রাজ্য আর কোনও বেসরকারি কেন্দ্রকে প্রতিষেধক দেবে না। কিন্তু একটা বিষয় স্পষ্ট, বেসরকারি কেন্দ্রগুলিকে প্রতিদিন দ্বিতীয় ডোজ়ের বিষয়ে অসংখ্য প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যাঁরা যে-বেসরকারি কেন্দ্রে টিকার প্রথম ডোজ় পেয়েছিলেন, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে বার বার প্রশ্ন করছেন সেখানেই।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে কলকাতা পুর এলাকার ২৩টি রাজ্য সরকারি, পাঁচটি কেন্দ্রীয় এবং ১৪৫টি আর্বান প্রাইমারি হেল্থ সেন্টার মিলিয়ে মোট ১৭৩টি কেন্দ্রে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ়ের জন্য গ্রাহকদের ওই সব সরকারি কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিতেও বলা হয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল বা টিকা কেন্দ্রগুলিকে। এ দিন নির্দেশিকার সঙ্গে ১৭৩টি কেন্দ্রের তালিকা দেওয়া হয়েছে। কোন কেন্দ্রে এই মুহূর্তে কোন প্রতিষেধক রয়েছে, তার উল্লেখ আছে ওই তালিকায়।

কেন্দ্র জানিয়েছিল, ১ মে থেকে সব সরকারি ও বেসরকারি টিকা কেন্দ্রকেই সরাসরি প্রতিষেধক প্রস্তুতকারী সংস্থা থেকে টিকা কিনে নিতে হবে। কিন্তু কী ভাবে কত পরিমাণে টিকা মিলবে, সেই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা ছিল না বেসরকারি হাসপাতাল বা টিকা কেন্দ্রগুলির। সেখানে টিকার দ্বিতীয় ডোজ় নিয়ে ধোঁয়াশা চলছে অনেক দিন ধরেই। বেসরকারি হাসপাতালের কর্তারা জানান, দ্বিতীয় ডোজ়ের টিকার ব্যবস্থা করার জন্য তাঁরা রাজ্য সরকারকে আবেদন জানিয়েছিল। সরকারও চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু এখনও ফল মেলেনি। অগত্যা যে-সব বেসরকারি হাসপাতাল নিজেরা প্রতিষেধক কিনতে পারেনি, তারা দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া বন্ধ রেখেছে। ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের টিকা কর্মসূচিও শুরু করা যায়নি। পিয়ারলেস হাসপাতালের কর্তা সুদীপ্ত মিত্র বলেন, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিষেধকের বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই গেল। যাঁরা আমাদের দীর্ঘদিনের গ্রাহক, সরকারি কেন্দ্রে যেতে বললে তাঁদের অনেকেই বিব্রত বোধ করবেন।’’

স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, কলকাতায় অসংখ্য বেসরকারি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হচ্ছিল। পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমানের আংশিক, দার্জিলিং, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনার কিছু বেসরকারি কেন্দ্রেও মিলছিল টিকা। ওই আধিকারিক বলেন, "সরকারের তরফে আর বেসরকারি হাসপাতালকে প্রতিষেধক দেওয়া হবে না। বেসরকারি হাসপাতালগুলি যদি নিজেরা কিনতে পারে, তা হলে দেবে। নইলে তাদের গ্রাহকদেরও সরকারি কেন্দ্রে এসেই নিতে হবে।" সেটা হবে কী ভাবে?

এক বেসরকারি হাসপাতালের কর্তা জানান, ধরা যাক, তাঁদের হাসপাতালে যিনি প্রথম ডোজ় নিয়েছেন, তাঁকে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালটি যে বরো-য় অবস্থিত, সেখানকার সরকারি কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে। পূর্ব ভারতে বেসরকারি হাসপাতাল সংগঠনের সভাপতি রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘‘আমরা ওই নির্দেশিকা নিয়ে পুর্নবিবেচনার আর্জি জানিয়েছি রাজ্য সরকারকে। কারণ, এতে অনেক গ্রাহকের সমস্যা হতে পারে। রাজ্য সরকার বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছে।" আবার উডল্যান্ডস হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও চিকিৎসক রূপালি বসু বলেন, ‘‘সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছি, ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী যদি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে যুক্ত করা যায়, তা হলে মানুষের সুবিধা হবে। সেখানে সরকারই প্রতিষেধক দেবে বেসরকারি হাসপাতালের জায়গা ব্যবহার করে।

বেসরকারি কেন্দ্রগুলি জানাচ্ছে, তারা সরকারের কাছ থেকে ১৫০ টাকায় প্রথম ডোজ় কিনেছিল। সেটি ২৫০ টাকায় পাচ্ছিলেন গ্রাহকেরা। কিন্তু ১ মে থেকে সরাসরি কেনার সিদ্ধান্তের ফলে দামও বদলে গিয়েছে। কোনও বেসরকারি টিকা কেন্দ্র টিকা কিনলেও ২৫০ টাকায় দ্বিতীয় ডোজ় দিতে পারবে না। তার জন্য গ্রাহকদের অনেকটা বেশি দাম দিতে হবে। এই অসামঞ্জস্য ঠিক হবে না বলেও জানাচ্ছেন অনেক বেসরকারি কেন্দ্রের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্য দ্বিতীয় ডোজ়ের ব্যবস্থা করে দিলে সুবিধা হত। এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রকে বিষয়টি জানিয়ে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা অনুমতি না-দিলে কিছু করার নেই। বেসরকারি কেন্দ্রগুলি নিজেরা টিকা কেনার চেষ্টা চালাতে পারে। আমাদের কাছে যে-পরিমাণ প্রতিষেধক আছে, দ্বিতীয় ডোজ়ের জন্য তা যথাযথ ভাবে ব্যবহার করতে চাইছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement