Calcutta High Court

‘দুর্নীতির মহাসমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছি!’ প্রাথমিক নিয়োগ মামলায় মন্তব্য বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, “দুর্নীতির সমুদ্রে আপনারা সাহায্য করছেন। তার পরও আমি হাবুডুবু খাচ্ছি। এ তো দুর্নীতির মহাসমুদ্র। এই অবস্থায় ঠগ বাছতে তো গাঁ উজাড় হয়ে যাবে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৩ ১৬:০৯
Share:

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

সব নদী গিয়ে সমুদ্রে মিশেছে। সেখান থেকে মানিক বেছে আনতে হবে। প্রাথমিক নিয়োগ মামলায় এমনই মন্তব্য করলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এই প্রসঙ্গে বিচারপতি বলেন, “দুর্নীতির মহাসমুদ্রে আমি হাবুডুবু খাচ্ছি।”

Advertisement

প্রাথমিকের একটি মামলায় মামলাকারীদের তরফে বলা হয়, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে ভাবে প্রচুর সংখ্যক বেআইনি নিয়োগ করা হয়েছে, তাতে পুরো প্যানেল বাতিল করা ছাড়া উপায় নেই। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানান, প্যানেল বাতিল হলে ন্যায্য উপায়ে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের কথাও ভাবতে হবে। যদি এক জনও থেকে থাকেন সেটাও দেখতে হবে। ফলে অন্য উপায় কী আছে, তা জানতে চান বিচারপতি।

Advertisement

বিচারপতির প্রশ্নের প্রেক্ষিতে মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য পাল্টা এই বলে প্রশ্ন তোলেন যে, ন্যায্যদের চিহ্নিত করা যাবে কী করে? উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) তো নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। যদি প্যানেল বাতিল করা হয়, তবে ন্যায্যদের বক্তব্য আলাদা ভাবে শুনতে পারে আদালত। মামলার সব পক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “দুর্নীতির সমুদ্রে আপনারা সাহায্য করছেন। তার পরও আমি হাবুডুবু খাচ্ছি। এ তো মহাসমুদ্র। দুর্নীতির মহাসমুদ্র। এই অবস্থায় ঠগ বাছতে তো গাঁ উজাড় হয়ে যাবে।” এই প্রসঙ্গে তাঁর সংযোজন, “এ নিয়ে বিস্তারিত শুনানি প্রয়োজন। তিন দিন ধরে মামলার সব পক্ষের বক্তব্য শুনব।” এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৪ এপ্রিল।

২০১৪ সালের টেটের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে প্রাথমিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রাথমিকে ৪২ হাজার ৯৪৯ পদে শিক্ষক নিয়োগ করে রাজ্য। বুধবার আদালতে রিপোর্ট দিয়ে সিবিআই জানায়, ২০১২ সালের টেটের জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। সেখানেই প্রথম বরাত পায় ‘এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি’। ভাল কাজ করায় এবং অন্য কেউ টেন্ডার জমা না দেওয়ায় ফের বরাত দেওয়া হয় ‘এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি’কে। সিবিআইয়ের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে এমনটাই জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি এবং নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি মানিক ভট্টাচার্য। তিনি আরও জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের টেটের ওএমআর শিট সরবরাহের জন্য তাঁদের তরফে কোনও টেন্ডার ডাকা হয়নি।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, “সিবিআইয়ের রিপোর্ট সন্তোষজনক নয়। নির্দ্বিধায় মিথ্যা বলার অভ্যাস রয়েছে মানিক ভট্টাচার্যের। তাঁর মন্তব্য, এটা কোনও জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছে? এর থেকে তো আমি ভাল জিজ্ঞাসাবাদ করি। হাই কোর্টের অনেক আইনজীবীও এর থেকে ভাল জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তদন্ত শেষ করতে হবে তো। এটা কোনও জিজ্ঞাসাবাদ? ছিঃ ছিঃ ছিঃ।” তিনি আরও বলেন, “এত ভূরি ভূরি অনিয়মের অভিযোগ আসছে এবং আদালতের কাছে এত তথ্য প্রমাণ রয়েছে, যার ভিত্তিতে ২০১৪ সালের টেটের ভিত্তিতে সংগঠিত হওয়া ২০১৬-র নিয়োগপ্রক্রিয়া খারিজ করে দেওয়া যায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যে, এটা করলে কিছু বৈধ ভাবে চাকরি পাওয়া ব্যক্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। একজনও বৈধ প্রার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমার ভাল লাগবে না। এখনও এই দুর্নীতিকে ঢাকতে কিছু দালাল বাজার ঘুরে বেড়াচ্ছে।”

সরকারকে আক্রমণ করে বিচারপতি বলেন, “এই সরকারের শিক্ষা দফতর এই দুর্নীতি দেখেও কী ভাবে চোখ বন্ধ করে রাখল, সেটা ভেবে আমি বিস্মিত। হতে পারে শিক্ষা দফতরের কেউ কেউ হাতে হাত রেখে এই দুর্নীতি করেছিলেন।” বিচারপতি জানান, এই প্যানেল থাকবে, না বাতিল হবে, সে বিষয়ে সব পক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে আদালত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement