Rampurhat

Rampurhat Clash: আশ্বাস, ফোন নম্বরও দিলেন এসডিপিও

গ্রাম ছেড়ে সাঁইথিয়ার বাতাসপুরে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠেছিলেন মিহিলাল শেখ। সঙ্গে ছিলেন তাঁর দাদা বানিরুল শেখ এবং পরিবারের আরও দু’জন।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

বগটুই (রামপুরহাট) শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২২ ০৭:০২
Share:

ফাইল চিত্র।

বদলার হামলায় পুড়ে মৃত্যু হয়েছিল স্ত্রী, মা, মেয়ে ও বোনের। তার পর থেকে গ্রাম ছেড়ে সাঁইথিয়ার বাতাসপুরে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠেছিলেন মিহিলাল শেখ। সঙ্গে ছিলেন তাঁর দাদা বানিরুল শেখ এবং পরিবারের আরও দু’জন। বুধবার ওই চার জনকে ফিরিয়ে আনল পুলিশ। তবে বগটুই গ্রামে নয়, তাঁরা সকলেই উঠলেন প্রায় এক কিলোমিটার দূরের কুমাড্ডা গ্রামে। বাড়িতে বসল পুলিশি পাহারা।

Advertisement

বগটুই গণহত্যার পরে নিহতদের পরিজনের পাশাপাশি আতঙ্কে ঘরছাড়া অনেকেই। এর মধ্যেই মঙ্গলবার রাতে রামপুরহাটের অস্থায়ী সিবিআই শিবির থেকে ফিরে বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায়কে ফোন করে পুলিশি প্রহরায় নিজেদের গ্রামে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আবেদন জানান মিহিলাল। জেলাশাসকের নির্দেশে এবং বিডিও (সাঁইথিয়া) সৈকত বিশ্বাসের সহযোগিতায় বুধবার মিহিলালদের বাড়ি যাওয়ার জন্য গ্রামে গাড়ি পাঠানো হয়। সঙ্গে পুলিশ। ওই গাড়িতে করেই মিহিলাল, বানিরুল, বানিরুলের ছেলে কিরণ শেখ এবং বানিরুলদের ভগ্নিপতি সোনা শেখের ছেলে আসাদুল শেখ কুমাড্ডায় পৌঁছন।

এই কুমাড্ডা গ্রামেই মেয়ে সাজিনা খাতুনের শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন মিহিলালের আর এক ভাই শেখলাল ও নেকলাল শেখ। শেখলালের স্ত্রী নাজিমা বিবিরও মৃত্যু হয়েছে ২১ মার্চ রাতের হামলায়। সেই বাড়িতেই এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ পৌঁছে দেওয়া হয় মিহিলালদের। কিছুক্ষণ পরেই ওই বাড়িতে আসেন রামপুরহাটের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত এসডিপিও ধীমান মিত্র। তিনি মিহিলালকে জানান, কোনও ভয়ের বিষয় নেই। সব সময় ওই বাড়িতে পুলিশ পাহারা থাকবে। যে কোনও সমস্যায় যেন তাঁকে সরাসরি ফোন করে খবর দেন তাঁরা। এর পরেই ওই পুলিশকর্তা নিজের নম্বর মিহিলালকে দিয়ে, তাঁর নম্বরও নিয়ে নেন। বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে পাঠানো হয় বগটুই গ্রামে গণহত্যার মামলার অভিযোগকারী সাব ইন্সপেক্টর ধ্রুবজ্যোতি দত্তকে।

Advertisement

মিহিলালদের পরিবারের কোন কোন সদস্য ওই বাড়িতে থাকছেন তা জানতে চান এসডিপিও। একে একে সকলে সামনে আসেন। এসডিপিও ওই ১১ জনের নাম নথিভুক্ত করেন। তখনই মিহিলাল জানান, বগটুই বড় মসজিদে ভাইপো থাকেন। এসডিপিও জানিয়ে দেন, এই সময় ওই যুবকও যেন এখানেই চলে আসেন। তাতে নিরাপত্তার সুবিধা হবে। এই সময়ে শেখলাল পুলিশ কর্তাকে বলেন, “ক্ষতিপূরণের চেক যেটা পেয়েছি, সেখান থেকে কিছু টাকার প্রয়োজন রয়েছে। সকলেই এক পোশাকে আট-নয় দিন ধরে কাটাচ্ছি। কিছু কেনাকাটা করতে হবে।” যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাঙ্কে গিয়ে সেই কাজ করতে সহযোগিতার আর্জি জানান মিহিলাল।

এসডিপিও পরে বলেন, “১১ জন এখন কুমাড্ডার এই বাড়িতেই থাকবেন। সর্বক্ষণের জন্য পুলিশি পাহারা রাখা হচ্ছে। বগটুই গ্রামেও পুলিশের মোটর সাইকেল, জিপের টহলদারি রয়েছে। নাকা চেকিংও রয়েছে।” আধার কার্ড, ব্যাঙ্কের পাসবই সব পুড়ে যাওয়ায় রাজ্য সরকারের ক্ষতিপূরণের চেক কী ভাবে ভাঙানো হবে তা নিয়ে এ দিন চার ভাই আলোচনাতেও বসেন।
সকলেই বলেন, “ঘর পুরো পুড়ে গিয়েছে। যতক্ষণ না সারানো হচ্ছে, তত দিন কুমাড্ডা গ্রামেই থাকতে হবে। ঘর ঠিক হলে আবার ফিরব।” মায়ের শোক কাটিয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছেন সাজিনাও।

মিহিলাল অবশ্য নিজের ছেলে মহম্মদ ইব্রাহিমকে বাতাসপুরে, তার মামাবাড়িতেই রেখে এসেছেন। মিহিলালের কথায়, ‘‘ছেলেটা এখন পড়াশোনা করছে। ওকে যদি আমরা সঙ্গে করে নিয়ে যাই,
তাহলে ওখানে মায়ের কথা, পরিবারের কথা মনে পড়বে। ফলে পড়াশোনা করতে পারবে না। ও যাতে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে, সেই জন্য এখন ওকে মামাবাড়িতে রেখে আমরা গ্রামে যাচ্ছি।’’

(সহ প্রতিবেদন: পাপাই বাগদি)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement