লীনা গঙ্গোপাধ্যায়
টিভি ধারাবাহিকের ছকে আটকে আফশোস করেছেন কখনও-সখনও। আবার বৌ-শাশুড়ির ঝগড়া, দাম্পত্য টানাপড়েনের চিত্রনাট্যের মধ্যেই মেয়েদের উত্তরণের গল্প বলতে চেয়েছেন। বহু জনপ্রিয় টিভি ধারাবাহিকের কাহিনিকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায় এ বার রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন হলেন।
মঙ্গলবারই নতুন ভূমিকায় দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন লীনা। এবং বলছেন, ‘‘সিরিয়াল লেখার সঙ্গে নতুন কাজটাকে মেলাতে চাইব না। তবে চেষ্টা তো করব, মেয়েদের সুবিচার দিতে।’’ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলে লীনার টিআরপি-জয়ী ধারাবাহিক ‘ইষ্টিকুটুম’, ‘জলনুপূর’ বা ‘সোনার হরিণ’ বা ‘চোখের তারা তুই’ বা ‘কুসুমদোলা’ও খানিকটা একই চেষ্টা করেছে। লীনা বলছেন, ‘‘দর্শকরা কী চান তা খুঁটিয়ে যাচাই করে গল্প তৈরি হয়, ঠিকই! তবু রবীন্দ্রনাথের ‘সাধারণ মেয়ে’র মতো মেয়েদের জিতিয়ে দিতে আমার ভাল লাগে।’’
এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিনোদন জগতকে রাজনীতি ও প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত করতে তৎপর হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লীনাকে নতুন দায়িত্বে আনা তারই অঙ্গ বলে মনে করা হচ্ছে। িটভির বহু জনপ্রিয় মুখ যে মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের, তা আগেও দেখা গিয়েছে। লীনার হাতে তৈরি চরিত্র ‘বাহামণি’র অভিনেত্রী যেমন!
বেশ কিছুকাল আগে ‘সোনার হরিণ’ বলে একটি ধারাবাহিকের ৪৫০ পর্বে কলম ধরেই তাকে দর্শক-আনুকূল্যে এক নম্বরে টেনে তুলেছিলেন লীনা। আস্তিনে ফ্লপ ধারাবাহিক নেই একটিও। বিনোদন জগতে লীনার এই সাফল্যকে মাথায় রেখেই মেয়েদের জন্য কাজ করার বৃহত্তর পরিসরে তাঁর কথা প্রশাসনের শীর্ষস্তর থেকে ভাবা হয়েছে।
তবে লীনার কাছে, মেয়েদের জন্য সামাজিক কাজ করা নতুন কিছু নয়। বছর তিনেক ধরে সমাজকল্যাণ দফতরের নারী উন্নয়ন নিগমের তিনি চেয়ারপার্সন। কাজ করেছেন মেয়েদের ক্ষমতায়ন নিয়েই। লেখালেখির জগতে আসার গোড়ার পর্বে রাজাবাজারের খালপারের শিশুদের নিয়ে নাটক করেছেন, পরে সোনাগাছির যৌনকর্মীদের নিয়ে গবেষণা করেও নাটক লিখেছেন। এখনও টিভি ধারাবাহিক লেখার সূত্রে গ্রামের মেয়েদের সঙ্গে নিয়মিত মেলামেশা করেন।
কিন্তু চিত্রনাট্যে যা সহজে হয়, মহিলা কমিশনের সভানেত্রীর পক্ষে তা সব সময়ে অত সোজা না-ও হতে পারে! কমিশনের কাজেও অনেক সময়েই রাজনৈতিক চাপের অভিযোগ তো ওঠে! আপাতত এ সব সংশয়কে আমল দিচ্ছেন না লীনা। হেসে বলছেন, ‘‘মেয়েদের অসম্মান থেকে বের করার চেষ্টা করব, জানি! তারপর সিরিয়াল বা জীবন— কোনটাই বা আগে থেকে আঁচ করা যায়!’’