প্রতীকী ছবি।
বৈশাখে গরমের জ্বালা সে-ভাবে মালুম হয়নি। জ্যৈষ্ঠের সূচনাতেও গাঙ্গেয় বঙ্গে জোলো ঠান্ডার রমরমা। প্রকৃতির এমন মেজাজে খুশি রাজ্যবাসী। কিন্তু এই নরম মেজাজ আগামী দিনে বিপদ ডেকে আনবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে আবহবিজ্ঞানীদের অনেকের মনে। তাঁদের একাংশের প্রশ্ন, গরমের নরম মেজাজ আখেরে বর্ষাকেই দুর্বল করে দেবে না তো?
আবহবিজ্ঞানীদের অনেকেই বলছেন, গ্রীষ্মকালে দক্ষিণবঙ্গের বাতাস গরম হয়ে ছোট ছোট ঘূর্ণাবর্ত তৈরি করে। একই ভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বঙ্গোপসাগর। সেই ঘূর্ণাবর্ত মৌসুমি বায়ুকে টেনে আনে গাঙ্গেয় বঙ্গে। কিন্তু এ বার গ্রীষ্মে পরের পর ঝড়বৃষ্টির জেরে বাতাস সে-ভাবে গরমই হচ্ছে না। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার আগমনের পথ কাঁটায় ঢেকে যেতে পারে।
দিল্লির মৌসম ভবন অবশ্য এই তত্ত্বে সিলমোহর দিতে নারাজ। এ বার দেশে স্বাভাবিক বর্ষার পূর্বাভাস দিয়েছে তারা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাসও বলছেন, ‘‘গরম দুর্বল হওয়ার সঙ্গে বর্ষার সরাসরি সম্পর্ক নেই।’’
আবহবিজ্ঞানের এক প্রবীণ গবেষক জানান, মৌসম ভবন মানছে না ঠিকই। তবে জোরালো গরম না-পড়লে বর্ষা যে দুর্বল হয়ে পড়ে, এটা বহু বার লক্ষ করা গিয়েছে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের শিক্ষক সোমনাথ রুদ্রের মতে, গরম মাথাচাড়া না-দিলে বর্ষা দুর্বল হয়ে পড়তেই পারে। তবে বর্ষার পিছনে আরও কয়েকটি প্রাকৃতিক কারণ ক্রিয়াশীল থাকে। সেগুলি জোরালো হলে গরমের দুর্বলতা সত্ত্বেও বর্ষা ছন্দ ফিরে পেতে পারে। ‘‘কালবৈশাখীর ঝড়বৃষ্টির মতো স্থানীয় প্রাকৃতিক ঘটনা বড় এলাকার আবহাওয়ার অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করছে, এটা অনেক সময়েই দেখা গিয়েছে,’’ বলেন তিনি।
অনেক আবহবিজ্ঞানীর বক্তব্য, গাঙ্গেয় বঙ্গে নির্ঘণ্ট মেনে বর্ষা আসতে (৮ জুন) অনেক দেরি। তত দিনে গরম মাথাচাড়া দিয়ে বর্ষার পথ প্রশস্ত করে দিতেই পারে। বর্ষা নিয়ম মেনে ১ জুন কেরল দিয়ে মূল ভূখণ্ডে ঢুকবে কি না, কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর তা জানায়নি। কিছু আবহবিজ্ঞানী বলছেন, মূল ভূখণ্ডে ঢোকার আগে মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখাটি আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ঢোকে। নির্ঘণ্ট অনুযায়ী ২০ মে বর্ষার সেখানে ঢোকার কথা। কিন্তু সময়মতো আন্দামানে ঢুকবে কি না, সেই বিষয়েও সংশয় রয়েছে। মৌসম ভবনের এক বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘বর্ষা নিয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না।’’
‘নরম’ গরমে বর্ষা এ বার ছন্দ হারায় কি না, সেটাই দেখার।