প্রতীকী ছবি
উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের দাবি জানাতে এসে ‘আমব্রেলা’ বানান ভুল বলায় রঙ্গ-ব্যঙ্গ টিটকিরিতে বিদ্ধ হয়েছিল মেয়েটি। এখন তার এমনই মানসিক অবস্থা যে সে ঘরবন্দি তো হয়েই গিয়েছে, ইতিমধ্যে তিন বার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছে বলে তার বাড়ির লোকজন জানাচ্ছেন। তাকে সর্বক্ষণ নজরে রাখতে হচ্ছে। কিন্তু না স্কুল, না পাড়া-পড়শি, কেউ এখনও তার পাশে এসে দাঁড়ায়নি।
গত ১৩ জুন নদিয়ার একটি স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকে অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সময়ে স্থানীয় একটি ইউটিউব চ্যানেলের প্রতিনিধি হঠাৎই বুম উঁচিয়ে মেয়েটিকে ‘আমব্রেলা’ শব্দের বানান জিজ্ঞাসা করেন। মেয়েটি প্রথমে পাল্টা জিজ্ঞাসা করে, তাঁরা কি এই সব করতে সেখানে এসেছেন? তার পরেও ওই প্রতিনিধি ফের জিজ্ঞাসা করলে ভুল বানান বলে। সেই ভিডিয়ো ক্লিপ সমাজমাধ্যমে ‘ভাইরাল’ হয়ে যায়। ফেসবুকে টিপ্পনী-টিটকিরির বন্যা বয়ে যায়। চটজলদি তৈরি হয়ে যায় নানা মিম। পরে নেট-নাগরিকদেরই একাংশ এই একবগ্গা অপমানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। ।
কটূক্তি-টিপ্পনী অবশ্য শুধু সমাজমাধ্যমেই সীমাবদ্ধ নেই। বাড়ির সামনে এসেও চিৎকার করে টিটকিরি কেটে যাচ্ছে কেউ কেউ। পরিবার সূত্রে জানা যায়, মেয়েটি এখন নিজেকে ঘরের মধ্যেই গুটিয়ে রেখেছে। তার কলেজ-পড়ুয়া দিদিও তার সঙ্গে ওই ঘরেই থাকে। কিন্তু মেয়েটি কথাবার্তা তেমন বলছে না, খাওয়া-দাওয়াও ঠিক মতো করছে না। মঙ্গলবার তার মা বলেন, “মেয়ে এর মধ্যে তিন বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। কোনও মতে ঠেকিয়েছি। সারাক্ষণ নজরে রাখি।” তাঁর প্রশ্ন, “নিজেদের পরিবারের কেউ হলে এমন করতে পারতেন?”
সমাজতত্ত্ববিদ রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, “ইন্টারনেটে ‘ট্রোলিং’ বা সমবেত আক্রমণ বলতে যা বোঝায় এটা তার থেকেও বড়। এক জনের ব্যক্তিগত সম্মানে আঘাত করা হচ্ছে, মানসিক ভাবে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে।” মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সুজিত সরখেল বলছেন, “এটা তো আর হাসি-মশকরায় সীমাবদ্ধ নেই। একই ব্যাপার নিয়ে বারবার খোঁচা দেওয়া হচ্ছে, সেটা মেনে নেওয়া কঠিন হচ্ছে মেয়েটির পক্ষে। এই ধরনের কাজে সকলেরই বিরত থাকা উচিত।” এই নিয়ে আগেই সমাজমাধ্যমে সরব হতে দেখা গিয়েছে অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রকে। তাঁর বক্তব্য, “ছাত্রীটি ভুল বলে থাকলে তাকে সংশোধন করে দেওয়া যেত। তার ভুল বলার দায় তো আমাদের সবার। একটা বাচ্চা মেয়েকে বলির পাঁঠা না করে কী শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে তার বিচার করা উচিত।”
মেয়েটির বাড়ি যেখানে, এ দিন সব শুনে সেই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বলেন, “অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীদের পাশ করানোর দাবিতে বিক্ষোভ আমরা সমর্থন করি না। কিন্তু ভুল বানান বলার জন্য কাউকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হতে হবে, এটাও কাঙ্ক্ষিত নয়।” মেয়েটি যে স্কুলের ছাত্রী, সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ফোন ধরেননি। তবে স্থানীয় মতুয়া সংগঠন ওই ছাত্রী এবং তার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। সেই সংগঠনের তরফে এক প্রতিনিধি বলেন, “যাঁরা কটূক্তি করছেন, তাঁরাই মানসিক ভাবে অসুস্থ। মেয়েটির কাউন্সেলিং করানোর পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবছি আমরা।” এ দিন ওই ইউটিউব চ্যানেলের প্রতিনিধি বলেন, “ইংরেজিতে পাশ করানোর দাবি তুলছিল, তাই বানান জিজ্ঞাসা করেছি। পরে মনে হয়েছে, না করলেই হত।”
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।