মামলার পরবর্তী শুনানির দিন সিআইডির ডিআইজিকে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
বাবা স্কুলের প্রধানশিক্ষক। পুত্রও সেই স্কুলেই চাকরি পেলেন। তবে নিয়ম মেনে পরীক্ষায় পাশ করে নয়। অভিযোগ, এক পাশ করা শিক্ষকের সুপারিশপত্র জাল করে ‘বাবার স্কুলে’ চাকরি নেন পুত্র। বুধবার ওই ‘শিক্ষকের’ স্কুলে ঢোকা এবং বেতন বন্ধের নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর বেঞ্চে শুনানি ছিল মামলাটির। তিনি এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে সিআইডির ডিআইজিকে উপস্থিত থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন।
মুর্শিদাবাদের সুতির এক নম্বর ব্লকের ঘটনা। সেখানকার গোথা এয়ার স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পান স্কুলের প্রধানশিক্ষকের পুত্র অনিমেষ তিওয়ারি। ‘বাবার স্কুলে’ চাকরি পাওয়ার এই ঘটনাটি নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ হয়। দায়ের হয় মামলা। এমনকি, তথ্য জানার অধিকার আইনেও এই নিয়োগ নিয়ে তথ্য জানতে চান অনেকে। তাতেই ধীরে ধীরে পর্দা ওঠে প্রধান শিক্ষকের পুত্রের নিয়োগ-দুর্নীতির। জানা যায়, অনিমেষ ওই স্কুলে দীর্ঘ দিন ধরে চাকরি করলেও জেলার স্কুল পরিদর্শকের কাছে তাঁর নামে কোনও নিয়োগপত্রই নেই।
শুরু হয় তদন্ত। জানা যায়, নবম-দশম শ্রেণির এক ভুগোল শিক্ষকের নিয়োগপত্র এবং সুপারিশপত্র জাল করেই এই চাকরি পেয়েছেন অনিমেষ। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, যদি ওই শিক্ষকের নিয়োগপত্র জাল করে অনিমেষ চাকরি পেয়ে থাকেন তবে যোগ্য ব্যক্তির কী হল? তিনি কি চাকরি করছেন না? দেখা যায়, তিনিও বহাল তবিয়তে চাকরিরত মুর্শিদাবাদেরই বেলডাঙার একটি স্কুলে।
সাধারণত প্রত্যেক নিয়োগপত্রের একটি মেমো নম্বর থাকে। অনিমেষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সেই মেমো নম্বর এক রেখে নিজের নাম বদলে দেন নিয়োগপত্রে। সেই জাল মেমো নম্বরের নিয়োগপত্রেই ভুগোল শিক্ষক হিসাবে চাকরি পান গোথা এয়ার স্কুলে। যদিও আরটিআইয়ের মাধ্যমে স্কুলের কাছে অনিমেষের ব্যাপারে তথ্য চাওয়া হলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক অর্থাৎ অনিমেষের বাবা জানিয়ে দেন, অনিমেষ সেখানে কর্মশিক্ষার শিক্ষক।
হাই কোর্টে এই মামলা এবং অনিমেষের বিরুদ্ধে যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ দেখে শুনে বিচারপতি বসু বলেন, ‘‘ঘটনাটি অনভিপ্রেত। এই ঘটনার তদন্ত হওয়া দরকার।’’ অবিলম্বে অনিমেষের স্কুলে প্রবেশ এবং বেতন বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি বলেন, আগামী শুনানিতে সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে হাই কোর্টে হাজির থাকতে হবে সিাইডির ডিআইজিকে। অনুমান, এই নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তভার রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থার হাতেই দিতে পারেন বিচারপতি বসু।