কাটোয়ায় দুয়ারে শিক্ষকেরা। নিজস্ব চিত্র।
স্কুলছুটদের পড়াশোনার জগতে ফিরিয়ে আনতে পথে নামলেন শিক্ষকেরা। সঙ্গে নিলেন পরিচালন সমিতির সদস্যদেরও। স্কুলে না আসার কারণ খুঁজতে রবিবার কাটোয়ার পঞ্চাননতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা স্কুলে অনুপস্থিত পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি ঘোরেন। স্কুল সূত্রের খবর, বছর খানেক ধরে প্রায় শ’খানেক পড়ুয়া স্কুলে আসছে না। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভিন্ রাজ্যে কাজে চলে গিয়েছে। কারও আবার নাবালিকা অবস্থাতেই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এ-ও নজকরে এসেছে, কোনও কোনও পড়ুয়া গভীর রাত পর্যন্ত মোবাইলে আসক্ত হয়ে থাকায় পরের দিন ঘুম থেকে দেরি করে ওঠে। তার পরে আর স্কুলে যেতে পারে না। এ ভাবেই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা দিনের পর দিন কমে যাওয়ায় চিন্তিত শিক্ষকেরা।
কাটোয়ার পঞ্চাননতলা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলটি বহু পুরনো। সেখানে ছাত্রছাত্রী একসঙ্গে পড়ে। বর্তমানে স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১৬০০। স্কুল সূত্রের খবর, বেশ কয়েক মাস ধরেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে, দিনের পর দিন স্কুলে পড়ুয়াদের হাজিরা কমছে। রবিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে শিক্ষকেরা পঞ্চাননতলা, গোপালপুর, বাঁধমুড়ো গ্রামে স্কুলে না আসা পড়ুয়াদের বাড়ি গিয়েছিলেন। স্কুলের পরিচালন সমিতির সদস্য চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পড়ুয়াদের স্কুলে ধরে রাখার জন্য অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। এদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমরা সেই প্রচারই করেছি। এতে ভাল সাড়া পেয়েছি।” পঞ্চানতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসের মুর্শিদ বলেন, “স্কুলছুটের সংখ্যা কমানো লাগাতার চেষ্টা করছি। দেখেছি, নাবালিকা অবস্থায় কোনও কোনও ছাত্রীর বিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার কোনও ছাত্র বাইরে কাজে চলে গিয়েছে। আমরা অভিভাবকদের বুঝিয়েছি। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”
শিক্ষা প্রশাসন সূত্রের খবর, অনেক স্কুলেই পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে। মূলত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে এই সমস্যা বেশি। ছাত্র ও ছাত্রী প্রায় সমানুপাতিক হারে ক্লাস-বিমুখ হয়ে পড়ছে। নিয়মিত ক্লাস করার কথা শিক্ষকেরা বললেও কাজ হচ্ছে না। এমনকী, অভিভাবকদের একাংশও উদাসীন বলে অভিযোগ। কী ভাবে এই এই সমস্যার মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে শহরের স্কুলগুলি রীতিমতো চিন্তিত।
কাটোয়া ও দাঁইহাট শহর-সহ মহকুমায় ৭৪টি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। প্রতি বছর স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা খাতায় কলমে ঠিক থাকলেও ক্লাসে হাজিরা সংখ্যা খুবই কম থাকে বলে দাবি নানা স্কুলের। প্রায়ই স্কুলগুলিতে দু’টি শ্রেণির ক্লাস একটি ঘরে হয়। বহু পড়ুয়া সপ্তাহে এক অথবা দুই দিন স্কুলে আসে। দেখা গিয়েছে, মেধাবী পড়ুয়ারা প্রাইভেট টিউশনে জোর দেয়। বাড়িতেই পড়াশোনা করে তারা। অন্য দিকে, গরিব ঘরের পড়ুয়ারা কাজ পাওয়ার প্রশিক্ষণে যোগ দেওয়ার কারণে স্কুল-বিমুখ হয়ে পড়ছে, দাবি অনেক স্কুলের। দুঃস্থ পরিবারের পড়ুয়ারা পড়াশোনা চলাকালীন নানা কাজে যোগ দিচ্ছে। কেউ কাঠের মিস্ত্রি হচ্ছে, কেউ সোনার কাজ শিখে পড়াশোনায় ইতি টানছে। অনেকে ক্লাস না করে বাড়িতে পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিচ্ছে। গ্রামের দিকে গরিব পরিবারের অনেক নাবালিকা পড়ুয়ার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে।