College

পড়ুয়াদের জন্য নতুন ছন্দে তৈরি শিক্ষাঙ্গন

বাংলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবশ্য আজই খুলছে এবং তা নিয়ে স্কুল, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রস্তুতি তুঙ্গে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৫:৩৯
Share:

অবশেষে খুলছে স্কুল-কলেজের দরজা। সরস্বতী পুজোরও বাকি আর মাত্র ক’দিন। তার আগে আলপনা দিতে ব্যস্ত সংস্কৃত কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। বুধবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

করোনা পর্বে গত প্রায় দু’বছরে স্কুল দু’বার এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এক বার খুললেও কোনও ক্ষেত্রেই তার স্থায়িত্ব বেশি ছিল না। অতিমারির ভাটার টান স্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় সব প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গে স্কুল স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যাবতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে যাচ্ছে। সংক্রমণ নিয়ে কমবেশি চিন্তা থাকলেও ফের শিক্ষাঙ্গন অবাধ হতে চলায় পড়ুয়া, শিক্ষক, অভিভাবক থেকে সর্বস্তরেই স্বস্তি ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। সরস্বতী পুজোর আগেই সব সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও দিল্লি বোর্ডের অনেক বেসরকারি স্কুল সোমবার খোলা হবে বলে জানানো হয়েছে।

Advertisement

বাংলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবশ্য আজই খুলছে এবং তা নিয়ে স্কুল, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রস্তুতি তুঙ্গে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, স্যানিটাইজ়েশন বা জীবাণুমুক্তির প্রক্রিয়া শেষ। শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীরা ইতিমধ্যেই স্কুল-কলেজে আসতে শুরু করে দিয়েছেন। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে অচিরেই দেখা হবে। তাই নতুন উদ্যমে কাজ করে চলেছেন তাঁরা। অতিমারির মধ্যে আগের দু’বার স্কুল খুলে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস চালু করা হয়েছিল। এ বার আপাতত তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অষ্টম শ্রেণিও। প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে সপ্তম শ্রেণির স্কুল এখনই না-খুললেও তারা পড়বে পাড়ায় শিক্ষালয়ে। বেসরকারি স্কুলে ক্লাস চলবে অনলাইনে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে তাঁরা সদাসতর্ক রয়েছেন বলে জানাচ্ছেন প্রতিটি স্কুল ও কলেজের কর্তৃপক্ষ। যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার বলেন, “অষ্টম শ্রেণির ক্ষেত্রে প্রথম দিন বিজোড় এবং পরের দিন জোড় সংখ্যার রোল নম্বরের পড়ুয়াদের আসতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নবম থেকে দ্বাদশের পড়ুয়ারা আসবে।” অমিতবাবু জানান, এক-একটি সেকশনে প্রতিটি বেঞ্চে এক জন বা দু’জন পড়ুয়াকে বসানো হবে।

Advertisement

শহরের বেশির ভাগ স্কুল কোভিড বিধি মেনে সেকশন ভাগ করে পড়ানোর পরিকল্পনার কথা বললেও সমস্যা দেখা দিয়েছে গ্রামের বিদ্যালয়ে। কারণ, ইচ্ছে থাকলেও পর্যাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাবে তারা এক-একটি শ্রেণির পড়ুয়াদের বেশি দলে ভাগ করে পড়াতে পারবে না। সে-ক্ষেত্রে করোনা বিধি কী ভাবে পুরোপুরি মেনে চলা যাবে, সেই দুশ্চিন্তা আছে। নদিয়ার শিকারপুরের একটি স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা রমা মণ্ডল জানান, শিক্ষকের অভাবে পারস্পরিক দূরত্বের বিধি মেনে সেকশন ভাগ করে পড়ানো খুবই কঠিন। প্রায় একই কথা বলেছেন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার কুমিরমারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রণয় মণ্ডল। তাঁর কথায়, “স্কুলে ২৩টি শিক্ষকপদের মধ্যে ১৯টিই খালি। পার্শ্ব শিক্ষক ও আংশিক সময়ের শিক্ষক দিয়ে কাজ চলছে। নতুন ব্যবস্থায় পার্শ্ব শিক্ষকেরা চলে যাবেন পাড়ায় শিক্ষালয়ে পড়াতে। পড়ুয়ার সংখ্যা প্রচুর। এই অবস্থায় সেকশন ভাগ করে পড়াব কী ভাবে? স্যানিটাইজ়েশনের কাজ অবশ্য পুরো করে ফেলেছি।”

রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন কলেজে তৃতীয় ও পঞ্চম সিমেস্টারের পরীক্ষা সদ্য শেষ হয়েছে, কোথাও কোথাও এখনও চলছে। বৃহস্পতিবার ক্লাস করার মতো পরিস্থিতিতে আছেন প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষার্থীরা। কোনও কোনও কলেজ শুধু ওই সিমেস্টারের পড়ুয়াদেরই আসতে বলছে। সামনেই প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষা। কিছু কলেজ প্রথম সিমেস্টারের পড়ুয়াদের না-ডেকে যাঁরা তৃতীয় ও পঞ্চম সিমেস্টারের পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁদের ডাকছে চতুর্থ ও ষষ্ঠ সিমেস্টারের ক্লাস করার জন্য। সিবিসিএস পদ্ধতিতে পরীক্ষার ফলপ্রাশের আগেই পরবর্তী সিমেস্টারের ক্লাস শুরু হয়ে যায়।

গড়িয়া দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজের অধ্যক্ষ সোমনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, ক্যাম্পাস জীবাণুমুক্ত করে তাঁরা ক্লাস শুরু করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। শুধু প্রথম সিমেস্টারের পড়ুয়ারা বৃহস্পতিবার থেকে ক্লাস করতে আসবেন। নিউ আলিপুর কলেজের অধ্যক্ষ জয়দীপ ষড়ঙ্গীও জানান, এখন আসবেন শুধু প্রথম সিমেস্টারের পড়ুয়ারা। তাই বড় শ্রেণিকক্ষে তাঁরা পড়ুয়াদের অনেক ছড়িয়ে বসার বন্দোবস্ত করতে পারছেন। চতুর্থ ও ষষ্ঠ সিমেস্টারের ক্লাস শুরু হবে সপ্তাহখানেক পরে।

ক্যানিং বঙ্কিম সর্দার কলেজের অধ্যক্ষ তিলক চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জানান, তাঁরা কলেজ খুললেও ক্লাস চালু করবেন সরস্বতী পুজোর পরেই। প্রথমে চতুর্থ ও ষষ্ঠ সিমেস্টারের পড়ুয়াদের ডাকা হবে। তিলকবাবুর বক্তব্য, প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষা সামনে এসে পড়েছে। তাই ওই সিমেস্টারের পড়ুয়াদের ডাকছেন না।

সাগর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ প্রবীর খাটুয়া অবশ্য এখন প্রথম সিমেস্টারের পড়ুয়াদেরই ডাকছেন। তাঁর বক্তব্য, পরীক্ষার আগে ওই পড়ুয়াদের একটু ‘গাইড’ করার লক্ষ্যেই তাঁদের আগে ডাকা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement