প্রতীকী ছবি।
করোনা আবহে বাংলায় রক্ত সঙ্কটের পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে বুধবার সারা রাজ্যের রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা। আরও আগে কেন পরিকল্পনা করা হল না, বৈঠকের পরই সেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
এদিন দুপুর ১২টা থেকে শুরু হওয়া ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রায় ৭০ জন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছিলেন। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অভিজিৎ মণ্ডল জানান, এখন রাজ্যে দশ হাজার ইউনিট রক্ত রয়েছে। বিগত বছরগুলিতে অগস্টে গড়ে মজুত রক্তের পরিমাণ হল ২৫ হাজার ইউনিট। এ বছর ১০ হাজারের কিছু বেশি যে রক্ত রয়েছে তা-ও গত শনিবার (১৫ অগস্ট) এবং রবিবারের শিবিরের পরে সম্ভব হয়েছে। ১৫ অগস্ট রাজ্যে ৪২০০ ইউনিট রক্ত সংগৃহীত হয়েছে। রবিবার সংগৃহীত হয়েছে ২ হাজার ইউনিট রক্ত।
স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, লকডাউন পর্বের তুলনায় রক্তের চাহিদা বাড়লেও জোগানে ঘাটতি মেটানো যায়নি। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, লকডাউন পর্বে প্রতিদিন ৮০০-১০০০ ইউনিট রক্ত খরচ হচ্ছিল। তা এখন বেড়ে প্রতিদিন ১৮০০-২০০০ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হচ্ছে। স্বাস্থ্য ভবনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এই হিসাবে এখন রাজ্যে মাত্র পাঁচদিনের রক্তের জোগান রয়েছে। বহু ব্লাড ব্যাঙ্কের অবস্থা এতখানি শোচনীয় যে একদিনের প্রয়োজন মেটানোর মতো রক্তও মজুত নেই!’’
এখানেই পরিকল্পনার অভাবের কথা বলছেন রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মীরা। রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মীদের প্রশ্ন, কোভিড হাসপাতালের সংখ্যাবৃদ্ধি, পিপিই-মাস্ক-স্যানিটাইজারের জোগান, হাসপাতালে অক্সিজেন-শয্যার ব্যবস্থা, সিসিইউয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি, টেলি মেডিসিন, অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার মতো রক্তের পর্যাপ্ত জোগানও যে গুরুত্বপূর্ণ তা কি ভাবা হয়নি!
জাতীয় রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের স্বেচ্ছায় রক্তদান সংক্রান্ত পরামর্শদাতা কমিটির সদস্য অপূর্ব ঘোষের বক্তব্য, সব রাজ্যেই সংক্রমণের আশঙ্কায় শিবিরের আয়োজন করে রক্ত সংগ্রহে প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মোবাইল বাস-ভ্যানের মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধান করেছে অন্য রাজ্যগুলি। ওড়িশায় ৩৭টি মোবাইল ভ্যান রয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যে বছরের গোড়ায় ১০টি মোবাইল বাস নামানোর কথা বললেও মাত্র চারটি এখনও পর্যন্ত নামানো গিয়েছে। এদিনের বৈঠকে আরও ছ’টি বাস শীঘ্র শিলিগুড়ি, কোচবিহার, বহরমপুর, মালদহ এবং বর্ধমানকে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকেরা। সংক্রমণের পাঁচমাস পরও পরিকল্পনা স্তরে রয়েছে এমন গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি?
বস্তুত, রক্ত সংগ্রহের পরিমাণ বৃদ্ধিতে কী করণীয় তা জানাতে গিয়ে এদিন গাড়ি, মেডিক্যাল অফিসার, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের অভাবের মতো পুরনো সমস্যাগুলিরই পুনরাবৃত্তি করেছেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের নির্দেশে আগামী দিনে জেলাস্তরে কোভিডের চিকিৎসায় প্লাজমা সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য ভবনের খবর, বৈঠকে রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অভিজিৎ মণ্ডল বলেছেন, কেরল-গুজরাত দু’সপ্তাহ আগে যা শুরু করেছে তা এখন এই রাজ্যে শুরু হতে চলেছে।
রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের ডেপুটি ডিরেক্টর গোপাল বিশ্বাস বলেন, ‘‘কোভিড পরিস্থিতি কী আকার নেবে তা কেউই আন্দাজ করতে পারেনি। এ সঙ্কট কবে মিটবে তা-ও জানা নেই। সেই প্রেক্ষিতে আগামিদিনে সমস্যার মোকাবিলায় কৌশল নির্ধারণে সকলের মতামত নেওয়া হয়েছে। রক্তের বিরাট আকাল রয়েছে তা কিন্তু নয়। দু’এক জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু কেউ রক্ত না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন তা নয়।’’