আরও এক মাস ঝুলে রইল পঞ্চায়েত মামলা। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ আজ জানিয়েছে, পরবর্তী শুনানি হবে ৬ অগস্ট। প্রথমে ১৭ অগস্ট শুনানি হবে বলে জানিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি। কিন্তু ৭ অগস্ট পঞ্চায়েতের বিদায়ী বোর্ডের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। রাজ্য সরকার ও তৃণমূলের আইনজীবীরা সে কথা জানানোর পরে শুনানির দিন এগিয়ে আনেন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র। ৭ অগস্টের পরেও ফল ঘোষণার উপরে স্থগিতাদেশ জারি থাকলে প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হবে কি না, সেই প্রশ্নও ওঠে। প্রধান বিচারপতি জানান, ৬ তারিখেই তিনি কোনও একটা রায় দেবেন। কিন্তু তার আগে শুনানি সম্ভব নয়।
৭ অগস্টের মধ্যে শীর্ষ আদালতের রায় না-এলে পঞ্চায়েতের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল নবান্নের অন্দরে। কারণ সিপিএম এবং বিজেপির দায়ের করা মামলা গ্রহণের সময় শীর্ষ আদালত শুধু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী প্রার্থীদের নাম গেজেট বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রকাশের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও পঞ্চায়েত আইনে একাধিক গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারির কোনও সংস্থান নেই। ফলে ঝুলে ছিল গোটা প্রক্রিয়াটাই। নবান্নের একাধিক আধিকারিকের বক্তব্য ছিল, নতুন বোর্ড গঠন করা না গেলে প্রশাসনিক অচলাবস্থা দেখা দেবে। তখন প্রশাসক বসিয়ে কাজ চালানোর কথা বলছিলেন কিছু কর্তা। তাঁদের মতে, পঞ্চায়েত আইনে প্রশাসক বসানোর কথা বলা নেই ঠিকই, কিন্তু কাজকর্ম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রশাসক নিয়োগে অসুবিধা নেই। ২০১৩ সালে কয়েক মাসের জন্য এমনটা করা হয়েছিল।
আজ প্রধান বিচারপতি ৬ অগস্ট রায় দেবেন বলার পরে নবান্ন সূত্রের আশা, অন্তত ভোটে জেতা আসনগুলি নিয়ে গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করতে তখন হয়তো আর সমস্যা হবে না। সে ক্ষেত্রে অধিকাংশ বোর্ড গড়ে করে ফেলা যাবে বলেও আশাবাদী তৃণমূল।
এ দিন শীর্ষ আদালত অবশ্য বিপুল সংখ্যক আসনে ভোট না-হওয়া নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলেছে। গত ৯ এপ্রিল রাত দশটায় মনোনয়ন পেশের সময়সীমা এক দিন বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। অভিযোগ, রাজ্য সরকার ও শাসক দলের চাপের মুখে পরের দিন সকালেই সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করেন নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহ। ডিভিশন বেঞ্চের সদস্য বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় প্রশ্ন করেন, কীসের ভিত্তিতে কমিশন নির্দেশ প্রত্যাহার করেছিল? তারা কি খোঁজখবর চালিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে সন্তুষ্ট হয়েছিল? তার পরেই কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে সময়সীমা বাড়ানোর প্রয়োজন নেই?
আরও পড়ুন: ডাক্তারদের ভোটেও বার্তা দিয়ে দাদাগিরি!
কমিশনের আইনজীবী অমরেন্দ্র শরণ যুক্তি দেন, ৩৪ শতাংশ আসনে ভোট না-হলেও অভিযোগের সংখ্যা খুবই কম। মাত্র ৮.৬ শতাংশ। যে সব বিরোধীশূন্য আসনে অভিযোগ জমা পড়েছে, তার হার মোট আসনের মাত্র ২.৯ শতাংশ। কিন্তু বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, এত অভিযোগের পরেও কমিশন বাস্তব পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করেনি কেন? বিচারপতি এ এম খানউইলকর বলেন, ‘‘আপনারা কোনও একটা আসনে মনোনয়নের সময়সীমা বাড়াননি। গোটা রাজ্যে বাড়িয়েছিলেন। যার অর্থ, গোটা রাজ্যেই অভিযোগ ছিল। তা হলে নির্দেশ প্রত্যাহার করা হল কেন?’’ বিজেপির আইনজীবী পি এস পাটওয়ালিয়া বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার ওদের ভয় দেখিয়েছিল।’’
তৃণমূলের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, সিপিএম-বিজেপি তো ভোটই চায়নি। ওদের তিনটি আবেদন হাইকোর্ট খারিজ করেছে।