Sourav Ganguly

Sourav Ganguly: দিদিকে ‘না’ দাদার, আপাতত রাজ্যসভা বা রাজনীতিতে আসতে চাইছেন না মহারাজ

তবে তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব সূত্রের দাবি, মমতা আদৌ সৌরভকে তেমন প্রস্তাব দেননি। তিনি নিছক জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে সৌরভের বাড়িতে গিয়েছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২১ ১৭:৩৯
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আপাতত রাজনীতিতে কোনওমতেই আসতে চান না সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ঘনিষ্ঠমহলে স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন তিনি। অস্যার্থ— জন্মদিনের বিকেলে বেহালার বাড়িতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যসভার প্রস্তাবে ‘না’ বলেছেন তিনি। যদিও তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব সূত্রের দাবি, মমতা আদৌ সৌরভকে তেমন প্রস্তাব দেননি। তিনি নিছক জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেই সৌরভের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেই সফর ছিল একেবারেই ‘সামাজিক’। তার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগসূত্র ছিল না। মমতার ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, ‘‘দিদি বরাবরই সৌরভের প্রতি স্নেহপ্রবণ। আগেও বরাবর জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এবার বাড়িতে গিয়ে জানিয়েছেন। কিন্তু তার ফলে তো শুভেচ্ছার সফর রাজনৈতিক হয়ে যায় না!’’

Advertisement

সৌরভ ঘনিষ্ঠমহলে যা জানিয়েছেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে, তিনি আপাতত কোনও ভাবেই রাজনীতিতে আসতে চান না। সেটা যেমন সত্যিই, তেমনই সত্যি তাঁর বয়ানের ‘আপাতত’ শব্দটি। অর্থাৎ, এখনই না হলেও ভবিষ্যতে (অদূর বা সুদূর) সেই রাস্তা যে খুলতে পারে, তারও ইঙ্গিত ওই বক্তব্যে রয়েছে। অসমর্থিত সূত্রের খবর, গত বৃহস্পতিবার সৌরভের বাড়িতে পারিবারিক জমায়েতের অবসরেই মমতা ঘুরিয়ে সৌরভকে রাজ্যসভার বিষয়টি বলেছিলেন। কিন্তু সৌরভ কোনও উচ্চবাচ্য করেননি। শনিবার তিনি ঘনিষ্ঠদের যা বলেছেন, তাতে স্পষ্ট যে তিনি ওই প্রস্তাব বিবেচনা করছেন না। আপাতত।

রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের একাংশের মমতার সৌরভের বাড়িতে সফরকে ‘অরাজনৈতিক’ বলে মেনে নিতে অসুবিধা রয়েছে। ওই অংশের মতে, মমতার ওই সফর আসলে সৌরভের থেকে বিজেপি-র দূরত্ব রচনার চেষ্টা। পক্ষান্তরে, সৌরভকে নিজস্ব ঘনিষ্ঠ বৃত্তে নিয়ে আসার প্রয়াস। যে প্রয়াস মমতা দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে শুরু করেছেন। শহরের বিশিষ্টদের সঙ্গে মমতার ব্যক্তিগত সম্পর্ক বরাবরই ভাল। বিভিন্ন বিশিষ্টের জন্মদিনে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে ফুল, মিষ্টি উপহারের সঙ্গেই আন্তরিক শুভেচ্ছাবার্তাও যায়। তাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতার সাক্ষরও থাকে। কিন্তু অন্য কোনও বিশিষ্টের বাড়িতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী শুভেচ্ছা জানানোর মতো ঘটনা সাম্প্রতিককালে ঘটেছে বলে কেউ মনে করতে পারছেন না। যদি না তিনি বয়সে অত্যন্ত প্রবীণ হন।

Advertisement

সৌরভকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বস্তুত, রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ তো সরাসরিই বলেছেন, ‘‘এই সফর পুরোদস্তুর রাজনৈতিক। শহরে তো আরও অনেক বিশিষ্টজন রয়েছেন। বাংলায় আইকন তো কম নেই। তাঁদের বাড়িতে তো মুখ্যমন্ত্রী জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে চলে যান না!’’

সৌরভের বাড়িতে মমতার যাওয়া নিয়ে জল্পনা ছড়ানোর পিছনে কারণ ছিল। কারণ, সৌরভ বিধানসভা ভোটে সরাসরি বিজেপি-র হয়ে মমতার বিরুদ্ধে যুযুধান হতে পারতেন বলে গোটা দেশে তুমুল জল্পনা ছড়িয়েছিল। তেমনই জল্পনা ছড়িয়েছে এই মর্মে যে, মমতা সৌরভকে পরোক্ষে হলেও রাজ্যসভার সাংসদের পদ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে থাকতে পারেন বলে। প্রসঙ্গত, দীনেশ ত্রিবেদী এবং মানস ভুঁইয়ার ছেড়ে আসা তৃণমূলের রাজ্যসভার দু’টি আসনই এখনও পর্যন্ত ফাঁকা আছে। তবে তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্বের একাংশ সেই সম্ভাবনা এবং জল্পনাকে সপাটে মাঠের বাইরে ফেলে দিচ্ছেন। তাঁদের দাবি, মমতার বেহালা সফর ছিল একেবারেই সৌজন্য এবং শুভেচ্ছা সংক্রান্ত। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক ছিল না। ওই অংশের দাবি, রাজ্যসভার অন্তত একটি আসন প্রবীণ নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিন্‌হার পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

সৌরভের ঘনিষ্ঠরা জানেন, রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে মহারাজ রাজনীতিতে নেমে পড়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেননি। বিভিন্ন হিতৈষীর পরামর্শও চেয়েছিলেন। রাজনীতিতে সৌরভের একেবারেই উৎসাহ নেই, একথা বললে সত্যের অপলাপ হবে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি পদে তাঁর উত্থানের সঙ্গেও প্রত্যক্ষ রাজনীতির যোগ রয়েছে। অসমর্থিত সূত্রের খবর, শেষ প্রহরে কর্নাটকের ব্রিজেশ পটেলকে ছিটকে ফেলে সৌরভ যে বিসিসিআই সভাপতি হয়ে বসেছিলেন, তার পিছনেও অমিত শাহের হাত ছিল। অমিত-তনয় জয় শাহ বোর্ডে সৌরভের ডেপুটি হওয়ায় যে ধারনা আরও জমি পেয়েছে। যদিও অমিত এবং সৌরভ উভয়েই প্রকাশ্যে সে কথা বারবার উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু জল্পনা তাতে থামেনি।

শেষপর্যন্ত অবশ্য সৌরভ বিভিন্ন ব্যক্তিগত কারণে রাজনীতির ময়দান থেকে দূরে থাকারই সিদ্ধান্ত নেন। মাঝখানে তাঁর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘটনাও মহারাজকে সেই ঝুঁকি নেওয়া থেকে অনেকটাই বিরত রেখেছিল। কারণ যা-ই হোক, দাদা ভোটের ময়দানে তাঁর বিরুদ্ধে নেমে না পড়ায় অখুশি হননি দিদি। তৃণমূলের অন্দরের একাংশের কথা বিশ্বাস করতে হলে মমতা খানিক প্রীতই হয়েছিলেন সৌরভের সিদ্ধান্তে। যদিও এরও কোনও আনুষ্ঠানিক সমর্থন কোনও স্তরেই মেলেনি।

মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠমহলের একাংশের দাবি, সেই প্রীতি এবং পাল্টা সৌজন্য থেকেই মমতার বৃহস্পতির বারবেলায় বেহালা সফর। তিনি যে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে বাড়িতে আসতে চান, তা আগেই সৌরভকে জানিয়েছিলেন মমতা। দিদির সঙ্গে বরাবরই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় দাদাও সানন্দে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। সৌরভ এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে মমতা বেরোনর পর থেকেই রাজ্যসভা সংক্রান্ত জল্পনা ছড়াতে শুরু করেছিল। যা ঘনিষ্ঠদের কাছে নাকচ করেছেন মহারাজ। আপাতত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement