প্রকাশ্যে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে মুখ খুললেন সৌমিত্র। —ফাইল চিত্র।
বাংলা থেকে চার জনের মন্ত্রী হওয়া নিয়ে যখন উচ্ছ্বাস দলে, ঠিক সেই সময়ই নেতৃত্বের সঙ্ঘাত প্রকট হয়ে উঠল রাজ্য বিজেপি-তে। শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে কার্যত মাতব্বরির অভিযোগ তুলেছেন সৌমিত্র খাঁ। তাঁর অভিযোগ, বার বার দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ভুল বোঝাচ্ছেন শুভেন্দু। তাঁর জন্য দল চালানোই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।
বুধবার নেটমাধ্যমেই যুব মোর্চার পদ ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন সৌমিত্র। এর পরে একটি ভিডিয়ো বার্তা পোস্ট করে নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষে কথা বলেন। সেখানেই সরাসরি শুভেন্দু এবং দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি। সৌমিত্র বলেন, ‘‘বিধানসভায় যিনি দলনেতা হয়েছেন, তিনি শুধু নিজেকে জাহির করছেন, দলকে নয়। যে ভাবে দলের কাজকর্ম চলছে, তাতে যুবমোর্চার সভাপতি হিসেবে কাজ চালানো মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমার ছেলেরা একসঙ্গে লড়াই করেছি। কিন্তু এখন যিনি নেতা, তিনি ফোকাসটা অন্য জায়গায় নিয়ে চলে গিয়েছেন। বার বার দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ভুল বোঝাচ্ছেন। দেখাচ্ছেন, তিনিই বিজেপি-র সবচেয়ে বড় নেতা।’’
সৌমিত্র জানিয়েছেন, এ নিয়ে দিলীপের কাছেও গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর কাছে বিষয়টি গুরুত্বই পায়নি। সৌমিত্রের কথায়, ‘‘আমাদের মাননীয় সভাপতিকে বলে লাভ হয়নি। তিনি অর্ধেক বোঝেন, অর্ধেক বোঝেন না। বাংলার যাঁরা মন্ত্রী হচ্ছেন, তাঁদের জন্য খুশি। কিন্তু বিজেপি যে ভাবে চলছে, তাতে ভাল কিছু হবে না। নতুন নেতা এসে যে ভাবে দলকে ভুল পথে চালিত করছেন, তাতে ভাল হচ্ছে না। সব কিছু একটা জায়গায় কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে। ভোটের এক মাস আগে এসে ১২৮ জনকে যোগদান করিয়েছিলেন তিনি। সব চোর, চিটিংবাজ। তাঁদের অনেকে হেরেও গিয়েছেন। হেরে যেতেই পারেন, তা নিয়ে দুঃখ নেই। কিন্তু দলে কাজ করতে পারছিলাম না।’’
সৌমিত্রের মন্তব্য নিয়ে যদিও সে ভাবে প্রতিক্রিয়া দেননি শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘সৌমিত্র খাঁ আমার ভাই। ওকে নিজের সতীর্থ বলে মনে করি। দিল্লি গেলে ওর বাড়িতেই খাওয়া-দাওয়া করি। ওর কথায় কিছু যায় আসে না। আমি চাই ওর শ্রীবৃদ্ধি হোক। ২০১১ সালে সৌমিত্র যখন জোটের প্রার্থী ছিল, ওর হয়ে প্রচারও করেছিলাম। এ সবকে গুরুত্ব না দেওয়াই ভাল। আমিও গুরুত্ব দিচ্ছি না।’’ সৌমিত্রের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে দিলীপ সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘আমি কোনও ইস্তফাপত্র পাইনি। পেলে তার পর এ নিয়ে কথা বলব।’’
তবে শুভেন্দু বিষয়টি লঘু করে দেখানো চেষ্টা করলেও, তাঁর বিরুদ্ধে আগাগোড়াই আক্রমণাত্মক ছিলেন সৌমিত্র। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের আগেই আপত্তি জানিয়েছিলাম। বলেছিলাম কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক ভুল করছে। দল একমুখী হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাকে কোণঠাসা করে দেওয়া হয়। এখন দিল্লি গিয়ে উল্টোপাল্টা বুঝিয়ে আসছেন। ভাবটা এমন যে বিজেপি-র জন্য জীবন দিয়ে দিচ্ছেন। আমাদের কোনও ত্যাগ নেই। সব ত্যাগ একা তিনি করছেন। আমি কিন্তু কোনও লোভ নিয়ে আসিনি বিজেপি-তে। দাদা-বাবার জন্য পদ চাইনি। দলের তহবিল থেকে আজ পর্যন্ত ১০০ টাকাও তুলিনি। আজও একতলা বাড়ি আমার। কিন্তু যে দু’জন এখন নেতা হয়ে বসেছেন, যে ভাবে দল চালাচ্ছেন, তা দলের পক্ষে শুভ নয়। বিরোধী দলনেতাকে বলব, আয়নায় নিজের মুখটা দেখুন। দিল্লিকে ভুল বুঝিয়ে নিজের মতো দল চালানোর চেষ্টা করবেন না।’’
সৌমিত্র আচমকা প্রকাশ্যে এ ভাবে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খোলায়, বিজেপি-র অন্দরে কার্যতই অস্বস্তি ধরা পড়েছে। দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা তা মেনেও নেন। স্বীকার করেন, নেটমাধ্যমে এ ভাবে অভ্যন্তরীণ সমস্যা প্রকাশ হয়ে যাওয়া মোটেই ভাল বার্তা দেয় না। সৌমিত্র তাঁর কাছেও উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন, কাজ করতে পারছিলেন না বলে মেনে নেন অনুপম। তবে নেটমাধ্যমে মুখ খোলার আগে, এ নিয়ে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সৌমিত্রর আলোচনায় বসা উচিত ছিল বলে মত অনুপমের।