মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি দেবযানীর মায়ের
সিআইডির বিরুদ্ধে মেয়ের উপর ‘মানসিক চাপ’ তৈরির অভিযোগ তুলে রাজ্য-রাজনীতিতে চাঞ্চল্য তৈরি করেছেন সারদা-কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের মা শর্বরী মুখোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার তিনি হাতজোড় করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে মেয়ে দেবযানীর জন্য বিচার চাইলেন। সংবাদমাধ্যমে ভয়-আতঙ্ক মিশ্রিত কাঁপা গলায় কাঁদতে কাঁদতে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে শর্বরীকে বৃহস্পতিবার বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, আমার মেয়ে যেন আর অন্য কেসে কোনও কেসে ফেঁসে না যায়।’’
শর্বরীর অভিযোগ, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী ৬ কোটি টাকা করে নিয়েছেন সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে, এ কথা বলার জন্য মেয়েকে ‘চাপ’ দিচ্ছে সিআইডি। শর্বরী জানান, এ নিয়ে বার কাউন্সিলকে চিঠি দিয়েছেন দেবযানী। অন্য দিকে, মেয়ের উপর ‘মানসিক চাপ’ সৃষ্টির অভিযোগ তুলে সিবিআই ও মানবাধিকার কমিশনকে তিনি নিজেও একটি চিঠি লিখেছেন। সিআইডির কথা না শুনলে তাঁর মেয়েকে ফাঁসানো হতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে শর্বরীর আবেদন, ‘‘আমার দিকে একটু তাকান। আমি আর্থিক, মানসিক, শারীরিক, পারিবারিক সব দিক থেকে বিপর্যস্ত। আমি হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, আমার মেয়ে যেন আর অন্য কোনও কেসে ফেঁসে না যায়।’’
২০১৪ সাল থেকে দমদম জেলে বন্দি দেবযানী। শর্বরীর দাবি, গত ২৩ অগস্ট ওই জেলে তিন জন সিআইডি আধিকারিক গিয়েছিলেন। ওই দলে ছিলেন সিআইডির ওসি অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। তাঁরাই দেবযানীকে চাপ দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে দেবযানীর মা বলেন, ‘‘১৩, ১৪, ১৫-র পর এত দিন বাদে ২২-এ এসে আবার সিআইডি কেন? আমি ১২৮টা কেস নিয়ে জর্জরিত। আমাকে একটু দেখুন।’’
শর্বরীর দাবি, শুভেন্দু ও সুজন দু’জনের কারও সঙ্গে দেবযানীর কখনওই সাক্ষাৎ হয়নি। দেবযানীই তাঁকে জানিয়েছেন, সারদার অফিসেও ওই দু’জনকে কখনও আসতে দেখা যায়নি। শর্বরীর কথায়, ‘‘সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে শুভেন্দু অধিকারী ও সুজন চক্রবর্তীকে ৬ কোটি টাকা ওর সামনেই দেওয়া হয়েছে, এ কথা বলতে বাধ্য করা হচ্ছে দেবযানীকে। কিন্তু আমার মেয়ে জানে না ওঁদের (শুভেন্দু ও সুজন) আদৌ টাকা দেওয়া হয়েছে কি না। দেবযানী কোনও দিন শুভেন্দু অধিকারী ও সুজন চক্রবর্তীর মুখোমুখিও হয়নি। সারদার অফিসে কোনও দিন আসতেও দেখেনি। সিআইডি আরও ন’টা কেসের কথা বলছে। ওদের বক্তব্য, দেবযানী এ কথা স্বীকার করে নিলে, এই কেসগুলি থাকবে না। না হলে এই কেসগুলি ওপেন করা হবে।’’
যদিও সিআইডির তরফে শর্বরীর সমস্ত অভিযোগই খারিজ করা হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তদন্তকারী সংস্থা হিসাবে আমরা আইন মেনেই সমস্ত তদন্ত করি। আগামী দিনে আইন মেনেই তদন্ত করব। সংবাদমাধ্যমকে এ ধরনের অপপ্রচার এবং ভুয়ো তথ্য থেকে দূরে থাকার জন্য অনুরোধ করছি।’ পাশাপাশি, সিআইডির তরফে দাবি করা হয়েছে, দেবযানীর সই করা কিছু চেক পাওয়া গিয়েছে। তার ভিত্তিতেই দেবযানীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যাওয়া হয়েছিল।