শুভেন্দু অধিকারী এবং সুদীপ্ত সেন— ফাইল চিত্র।
দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেলে বসে লেখা সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের চিঠির জবাবে এ বার সিবিআই-কে চিঠি দিলেন তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।
গত ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় সিবিআই-এর জয়েন্ট ডিরেক্টরের পাশাপাশি দিল্লিতে সিবিআই ডিরেক্টরের দফতরেও চিঠি পাঠিয়েছেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি, এত বছর পরে জেলে বসে সারদা কর্তার চিঠি লেখার ঘটনা আদতে চক্রান্ত। সত্যিই যদি সুদীপ্ত চিঠি লিখে থাকেন, তবে কেন এত দিন পর চিঠি লিখেছেন, সেই চিঠি কী ভাবে সংবাদমাধ্যমের হাতে এল তা নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন শুভেন্দু।
প্রেসিডেন্সি জেল থেকে লেখা চিঠিতে (যে চিঠির প্রতিলিপি আনন্দবাজারের কাছে রয়েছে, তার সারবত্তা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) সুদীপ্ত তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএমের প্রথম সারির পাঁচ জন নেতার বিরুদ্ধে তাঁর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। সেই তালিকায় রয়েছে শুভেন্দুর নাম। এ বার সেই চিঠির নেপথ্যের সত্য তুলে আনার আবেদন জানিয়ে সিবিআইকে পাল্টা আর্জি জানালেন শুভেন্দু।
শুভেন্দু চিঠিতে লিখেছেন, গত ১ ডিসেম্বর তিনি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানতে পারেন, সারদা মামলায় বিচারাধীন মূল অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেন এত বছর নীরব থাকার পর মোক্ষম সময় বুঝেই তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীকে। শুভেন্দুর দাবি, গত ২৭ নভেম্বর তিনি রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরেই সুদীপ্তের চিঠি পাঠানোর ঘটনা ‘বড়সড় চক্রান্ত’।
শুভেন্দু প্রশ্ন তুলেছেন, একজন বিচারাধীন বন্দির লেখা চিঠি যা প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্যের এডিজি এবং আইজি কারা বিভাগের হাতে থাকা উচিত, তা কী ভাবে ১ ডিসেম্বর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হল। তাঁর দাবি, চিঠিটি কোনও প্রভাবশালীর হস্তক্ষেপে জেল কর্তৃপক্ষ সুদীপ্তকে দিয়ে জোর করে লিখিয়েছেন। সারদা কর্তা অনেক তথ্য গোপন করে রেখেছেন। এই চিঠির নেপথ্যে ঠিক কোন কারণ তা খুঁজে দেখা প্রয়োজন।
পাশাপাশি, সুদীপ্তের লেখা চিঠির একটি অংশকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছেন শুভেন্দু। তাঁকে চিহ্নিত করে সারদা কর্তার লেখা— ‘এখন বিজেপিতে যোগ দিচ্ছে’। এই ভাষা ব্যবহার করে তাঁকে চূড়ান্ত ভাবে মানসিক আঘাত করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ভারত মহাসাগরে মোতায়েন ১২০ যুদ্ধজাহাজ, জানালেন জেনারেল রাওয়ত
প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা সুদীপ্তের চিঠিতে দাবি করা হয়েছিল, তিনি সুজন চক্রবর্তীকে ৯ কোটি টাকা, শুভেন্দুকে ৬ কোটি টাকা, অধীর চৌধুরীকে ৬ কোটি এবং বিমান বসুকে ২ কোটি টাকা দিয়েছিলেন। সুদীপ্ত ওই তথাকথিত প্রিজনার্স পিটিশনের শেষে এও লিখেছিলেন যে, ‘যাঁরা উচ্চ নৈতিক অবস্থান নিয়ে রয়েছেন, তাঁরা আসলে মানুষকে ঠকিয়েছেন, এখন বিজেপি-তে যোগ দিতে চলেছেন’।
আরও পড়ুন: নড্ডার কনভয়ে হামলা: দিল্লির ডাকে ‘অব্যাহতির অনুরোধ’ মুখ্যসচিব, ডিজি-র
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে রাজ্য পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে সিবিআইকে চিঠি লিখেছিলেন সুদীপ্ত। সেখানেও কয়েক জন রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে তাঁর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন।